বিশ্বে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ভোক্তা দেশ চীন। অভ্যন্তরীণ চাহিদার সিংহভাগ আমদানি করা জ্বালানি তেল দিয়ে পূরণ করে দেশটি। পণ্যটির শীর্ষ আমদানি বাজার চীন। এ কারণে চীনের বাজারে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা বজায় রয়েছে। এতদিন চীনা আমদানিকারকরা সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতেন। তবে সম্প্রতি এ অবস্থানে বদল ঘটেছে। সৌদি আরবকে টপকে চীনের বাজারে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশ হিসেবে উঠে এসেছে রাশিয়া। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস দেশটিতে জ্বালানি তেলের আমদানি-রফতানিবিষয়ক মাসভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরব থেকে চীনা আমদানিকারকরা প্রতিদিন গড়ে ১৫ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছিলেন। গত মাসে এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে দৈনিক গড়ে ১১ লাখ ৮ হাজার ব্যারেলে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বা এক-চতুর্থাংশ কম।
অন্যদিকে চলতি বছরের মে মাসে রাশিয়া থেকে চীনের বাজারে প্রতিদিন গড়ে ১৫ লাখ ব্যারেল (সব মিলিয়ে মাসে ৬৩ লাখ ৬০ হাজার টন) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) রাশিয়া থেকে চীনে প্রতিদিন গড়ে ১৪ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল বা মাসে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে উষ্ণ রয়েছে। জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। সৌদি আরবের তুলনায় সস্তা হওয়ায় ও পরিবহন ব্যয় তুলনামূলক কম লাগায় চীনা আমদানিকারকরা রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বেশি কিনছেন।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে এসে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের জের ধরে হরমুজ প্রণালি দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহন করার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পরপর কয়েকটি জ্বালানি তেলবাহী কার্গোতে হামলার ঘটনায় অনেক দেশই হরমুজ প্রণালি দিয়ে জ্বালানি পরিবহনে আগ্রহ হারিয়েছে। এ পরিস্থিতি আগামী দিনগুলোতে চীনা জ্বালানি তেল আমদানিকারকদের আরো বেশি করে মস্কোমুখী করতে পারে। ফলে চীনের জ্বালানি বাজারে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিযোগিতায় রাশিয়ার তুলনায় সৌদি আরব আরো পিছিয়ে পড়তে পারে।
এদিকে চীনা রাজস্ব বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে ইরান থেকে চীনে প্রতিদিন গড়ে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৩৭ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছিল। গত মাসে এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ২ লাখ ৫৪ হাজার ১৬ ব্যারেলে। গত বছরের মে মাসেও ইরান থেকে চীনা আমদানিকারকরা প্রতিদিন গড়ে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৬৭৪ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছিল। মূলত ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় তেহরান ও বেইজিংয়ের মধ্যকার জ্বালানি বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে।
তবে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ চলমান থাকলেও গত মে মাসে মার্কিন জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়েছে বেইজিং। এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে দৈনিক গড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৭২ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছিল। আর মে মাসে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৪০ ব্যারেলে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে চীনে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি বেড়েছে দৈনিক ৬৮ হাজার ৯৬৮ ব্যারেল।