আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের কয়েকটি ইস্যুসহ একগুচ্ছ বিষয়ে পরিবর্তন চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার বাজেট আলোচনা অংশ নিয়ে এই প্রস্তাব দেন তিনি।
পুঁজিবাজার:
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে চায় না। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রস্তাব বিবেচনার পাশাপাশি পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমাদের বিবেচনা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার পাশাপাশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রত্যাশা করেন। ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড দিলে অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হন। এইসব বিষয় বিবেচনা নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ড দেবে কমপক্ষে তার সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানির ঘোষিত স্টক ডিভিডেন্ডর পরিমাণ বেশি হয় তাহলে পুরো স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
তিনি বলেন, যদিও এ বিষয়ে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য হলো, জমাকৃত (পুঁঞ্জিভূত) মুনাফা, একুমোলেটেড প্রফিট, কোম্পানির ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। কোম্পানির সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। দেশি বিদেশি কোম্পানিগুলোর সম্প্রসারণ ও সংস্কারের জন্য অধিক পরিমাণ পুঁজির প্রয়োজন। তবে, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। সে প্রেক্ষাপটে ধারাটি অংশিক সংশোধন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি, কোনো অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট লাভ অর্থ্যাৎ নেট প্রফিট আফটার ট্যাক্সের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিংস ফান্ড, রিজার্ভ সারপ্লাস ইত্যাদিতে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থ্যাৎ কোম্পানিকে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ষ্টক ও ক্যাশ দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি এভাবে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবছর রিটেইন আর্নিংস ফান্ড, রিজার্ভ, সারপ্লাস এ স্থানান্তরিত মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।
ভ্যাট:
স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মুসক হার প্রচলন করা হচ্ছে। তবে ১৫ শতাংশের নিচের হারগুলোতে উপকরণ কর রেয়াত নেয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহন করে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানে সুযোগ সৃষ্টির জন্য দাবি করেছেন। হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে রেয়াত পদ্ধতিতে অংশ গ্রহন করতে পারে আইনে সে বিধান আনা হবে।
তাত শিল্প:
তাত শিল্পের ওপর ৫ শতাংশ মুসকের পরিবর্তে প্রতিকেজিতে ৪ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট হারে মুসক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দেশী শিল্প রক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে দেশের কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্প যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। দেশীয় মুদ্রন শিল্পে প্রণোদনা ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ করতে দেশে উৎপাদন হয় না এমন পেপার মিলের শুল্ক হার যৌক্তিক করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত কতিপয় পণ্যের শুল্ক হার পূর্ন নির্ধারন করা হবে।
দেশীয় শিল্প:
তিনি আরও বলেন, দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ, প্রণোদনা প্রদানে প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে শুল্কহার হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে এর ফলে দেশীয় কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশীয় মুদ্রণশিল্পের প্রণোদনা প্রদান ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধকল্পে দেশে উৎপন্ন হয় না এমন পেপারগুলোর শুল্কহার যৌক্তিক করা হবে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে শুল্কহার পুনর্নিধারণ করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।