ইংল্যান্ডে চলমান বিশ্বকাপে ভালো পারফরম করা সত্ত্বেও বিশ্বকাপে কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের এ আসরে সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে জয় ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। হেরে গেলে লিগপর্ব থেকেই এবার শেষ করতে হবে।
টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিয়ে ম্যাচ জয় করাই এখন একমাত্র লক্ষ্য মাশরাফি বাহিনীর। এমন লক্ষ্য নিয়ে বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে আজ খেলতে নামছেন টাইগাররা। বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয়ে বাংলাদেশের সামনে কঠিন এক সমীকরণ দাঁড়িয়েছে। লিগপর্বে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে তো জিততেই হবে। সেই সঙ্গে লিগপর্বে ইংলিশদের শেষ ম্যাচে হারতেই হবে। এই হিসাব-নিকাশ মিলে গেলেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশা পূরণ হবে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।
লিগপর্বে বাংলাদেশের শেষ দুই ম্যাচ ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। সাত খেলায় তিনটি করে জয়-হার এবং একটি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে টাইগাররা। শেষ দুই ম্যাচ জিতলে পয়েন্ট হবে ১১। আর যদি ইংল্যান্ড নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যায়, তা হলে স্বাগতিকদের পয়েন্ট থাকবে ১০-ই। সে ক্ষেত্রে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে যাবেন মাশরাফিরা। তাদের ওপরে থাকবে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ চতুর্থ স্থান দখল করে সেমিফাইনালে খেলবে। আর পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করবে যথাক্রমে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান।
এ জন্য সবার আগে শেষ দুই ম্যাচে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের হার কামনা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই টাইগারদের। আর যদি ইংল্যান্ড নিজেদের শেষ ম্যাচও জিতে যায়, তা হলে সেমিফাইনালে চলে যাবেন তারা। পাশাপাশি বাংলাদেশ যদি দুটি ম্যাচ জিতে আর ভারত অন্তত আরও এক পয়েন্ট পায়; তা হলে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টাইগারদের পয়েন্ট সমান হবে। তখন রান রেটে হিসাব করতে হবে। বর্তমানে রান রেটে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। শেষ দুই ম্যাচের রান রেট বেড়ে গেলেই কিউইদের টপকানো সম্ভব হবে।
তবে রান রেট বা অন্য সমীকরণে না যেতে চাইলে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ জিততেই হবে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের হার কামনা করতে হবে। তবেই সেমিতে পা দেবে মাশরাফির দল। শেষ দুই ম্যাচের প্রথমটি ভারতের বিপক্ষে।
তাই এখন নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়েছেন টাইগাররা। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর মতো সাফল্য রয়েছে। প্রোটিয়া ও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৩শর বেশি রান করে হারায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান করে। এর পর ফাফ ডু প্লেসিসদের ৩০৯ রানে আটকে দিয়ে ২১ রানে জয় তুলে নেন সাকিব-মুশফিকরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রানের বিশাল টার্গেট পায় বাংলাদেশ। সাকিবের অপরাজিত ১২৪ ও লিটনের হার না মানা ৯৪ রানে ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতেন টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতলেও নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারেন তারা। শ্রীলংকার সঙ্গে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়।
আজ ভারতের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ; শেষ ম্যাচ জয়ের সুবাদে। তবে মনের মধ্যে শঙ্কা বা আতঙ্ক ঠিকই থাকবে। কারণ হেরে গেলেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে হবে। এসব চিন্তা দূরে রেখে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। অতীতেও এমন রেকর্ড গড়ার স্মৃতি আছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর ম্যাচ ঘুরে দাঁড়ানোর নজির গড়েছে মাশরাফির দল। আজও নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখতে নিজেদের উজাড় করে দেবেন তারা। সেই অপেক্ষায় বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা।
ব্যাটিং লাইনআপে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন সাকিব। ৬ ম্যাচে ৬ ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফসেঞ্চুরিতে ৪৭৬ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে তিনি। বল হাতেও কম যাননি। নিয়েছেন ১০ উইকেট।
সাকিবের পর বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান উইকেটরক্ষক মুশফিকের। ছয় ইনিংসে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফসেঞ্চুরিতে ৩২৭ রান করেছেন তিনি। টপঅর্ডারে রানে ফিরেছেন তামিম। ছোট ছোট ইনিংস দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেন তিনি। নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬২ রানের ইনিংস খেলে এবারের আসরে প্রথম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান ড্যাশিং ওপেনার।
মিডলঅর্ডারে মাহমুদউল্লাহ একটি হাফসেঞ্চুরিতে করেন ১৯০ রান। তবে ভারতের বিপক্ষে তার খেলা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এখনও নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে লিটন, সৌম্য রানে ফিরলে বড় স্কোর গড়া বা টার্গেট স্পর্শ করা অসম্ভব কিছু হবে না।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের সাকিব, সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজ এখন পর্যন্ত ১০টি করে উইকেট নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে অফস্পিনার মোসাদ্দেকের স্পিন ভালো কাজে দেবে। আগের ম্যাচগুলোতে তার ব্রেক-থ্রু বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছিল। তবে এখনও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি অধিনায়ক মাশরাফি। ছয় ম্যাচে মাত্র একটি উইকেট টাইগার নেতার।
তবে এবার প্রতিপক্ষ ভারত বলে কথা। তাদের বিপক্ষে মাশরাফির জ্বলে ওঠার রেকর্ড রয়েছে। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে স্মৃতি আজও রোমাঞ্চিত করে তাকে। ২০০৪ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ ওভারে ৩৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন তিনি। এর পর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিদায় ঘণ্টা বাজান ম্যাশ। ৩৮ রানে তার ৪ উইকেট শিকারে প্রতিবেশীদের ৫ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ।
এ হারেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয় ভারতকে। তাই মাশরাফির আরও একটি ঝলক দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। আর অধিনায়কের হাত ধরেই স্বপ্নপূরণের আশা বেঁচে থাকুক দলের, এমনটিই প্রত্যাশা সমর্থকদের।