জিব্রাল্টার প্রণালীতে একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দের ঘটনায় তেহরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরান।
ইরানি তেলবাহী ওই নৌযানটিকে অবৈধভাবে আটকে রাখা হয়েছে বলে তারা অভিযোগও করেছে, জানিয়েছে বিবিসি।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনীর মেরিন ইউনিটের সদস্যদের সহায়তায় জিব্রাল্টারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রেস ১ নামের পানামার পতাকাবাহী ওই ট্যাংকার এবং এর কার্গোগুলো জব্দ করে।
ইরানি এ নৌযানটি সিরিয়ার বানিয়াস শোধনাগারের জন্য তেল নিয়ে যাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকেই ওই শোধনাগারটি ইইউ-র নিষেধাজ্ঞায় আছে।
স্পেনের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রী জোসেফ বোরেল বলেছেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষ এ তেলবাহী ট্যাংকারটিকে আটক করেছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ট্যাংকার জব্দের ঘটনাকে ‘একধরনের দস্যুতা’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর তেহরানের এ মন্তব্যকে ‘বাজে কথা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
বিবিসি বলছে, ট্যাংকারটি আটক করতে জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সাড়া দিয়ে রাজকীয় নৌবাহিনীর ফোর্টি টু কমান্ডোর প্রায় ৩০ মেরিন সেনা যুক্তরাজ্য থেকে উড়ে যান বলে তাদের জানানো হয়েছে।
একরকম নির্বিঘ্নেই নৌযানটি জব্দ করা হয়েছে, জানিয়েছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র।
বৃহস্পতিবারের এ ‘অবৈধ আটকের’ ঘটনায় তেহরানে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রবার্ট ম্যাকেয়ারকে তলব করা হয় বলে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাবির বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
পরে ইরানি টেলিভিশন চ্যানেল টু-কে দেওয়া এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে মৌসাবি ওই ট্যাংকার জব্দকে ‘এক ধরনের দস্যুতা’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন, গ্রেস ১ আটকের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বা আইনি ভিত্তি কোনোটারই তোয়াক্কা করা হয়নি।
ট্যাংকারটিকে যত দ্রুত সম্ভব ছেড়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
“যুক্তরাজ্য যে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতা নীতিই অনুসরণ করছে এ পদক্ষেপ তার ইঙ্গিত। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ইরান ও এর সরকারের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য,” বলেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষের অনুরোধের কথা বলে লন্ডন এ তেলবাহী ট্যাংকারটিকে আটক করলেও, এ বিষয়ে তথ্য যে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই এসেছে সে বিষয়ে তারা ‘প্রায় নিশ্চিত’।
ঘটনাটি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জোসেফ বোরেল।
জিব্রাল্টারের দখল নিয়ে যুক্তরাজ্য ও স্পেনের মধ্যে বিরোধ আছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ট্যাংকার আটকের ঘটনাকে ‘চমৎকার খবর’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, গ্রেস ১ সিরিয়ার জন্য যে তেল নিয়ে যাচ্ছিল, তা ইইউর নিষেধাজ্ঞার লংঘন।
এ ‘অবৈধ লেনদেনের’ মাধ্যমে তেহরান ও দামেস্ক লাভবান হচ্ছে উল্লেখ করে, এ ধরনের তৎপরতা রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান অনেকের চোখে ‘যুদ্ধবাজ’ হিসেবে পরিচিত বোল্টন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেরমি হান্ট বলেছেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ‘খুনি শাসনব্যবস্থা’ যেন মূল্যবান সম্পদ না পায় তা নিশ্চিত করতেই রাজকীয় নৌবাহিনী ও জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষ ট্যাংকার জব্দের তড়িৎ পদক্ষেপ নিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই এ ট্যাংকার আটকের ঘটনা ঘটল।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত এক পরমাণু চুক্তি থেকে ওয়াশিংটন বেরিয়ে গেলে এ উত্তেজনা দানা বাধতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছে। যদিও তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা এ পথে হাঁটেনি।
ওয়াশিংটন গত মাসে হরমুজ উপকূলের কাছে দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে মাইন হামলার জন্য তেহরানকে দায়ী করলেও ইরান তা উড়িয়ে দিয়েছে।
কয়েকদিন পর ইরান তাদের ‘আকাশসীমায় অবৈধভাবে ঢুকে পড়া’ একটি মার্কিন ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করলে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়।
“ইরান খুব বড় ভুল করেছে,” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সেসময় এমন হুঙ্কারও দিয়েছিলেন।
ড্রোন ভূপাতিত করার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বিমান হামলা চালানোর পরিকল্পনা করলেও, পরে সেখান থেকে পিছু হটে।
এদিকে ব্রিটিশ-ইরানি নারী নাজনীন জাহারি-রেটক্লিফের কারাদণ্ড নিয়েও লন্ডন ও তেহরানের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৬ সালে ইরান ওই নারীকে ৫ বছরের সাজা দেয়; নাজনীন অবশ্য শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।