কমেছে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৭-০৭ ১১:৫২:৩২
গত বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তির দিকে ছিল। একপর্যায়ে গত মে মাসে বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে সর্বশেষ জুন মাসে বিশ্বব্যাপী খাবারের দাম কিছুটা কমে এসেছে। এ সময় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের মধ্যে জুনেই প্রথম বৈশ্বিক খাদ্যমূল্যে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। গত মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্য, চিনি ও আমিষ পণ্যের দাম বাড়লেও ভোজ্যতেল ও দুগ্ধপণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে দুগ্ধপণ্যের দামে বড় পতন জুনে বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য কমিয়ে দিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসভিত্তিক ফুড প্রাইস
ইনডেক্সে (এফএফপিআই) এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর এফএও।
সর্বশেষ এফএফপিআইয়ে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১৬৩ দশমিক ৯ পয়েন্ট। পরের মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৬ দশমিক ৮ পয়েন্টে। মার্চে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আরো বেড়ে ১৬৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়। আর এপ্রিলে এ সূচকমানের অবস্থান দাঁড়ায় ১৭০ পয়েন্টে। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গত মে মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় সূচকের অবস্থান ছিল ১৭৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট। চলতি বছরের মধ্যে এটাই এ সূচকমানের সর্বোচ্চ অবস্থান।
তবে জুনে এসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এ সময় সূচকের অবস্থান ছিল ১৭৩ পয়েন্ট, যা আগের মাসের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ কম। অর্থাৎ ২০১৯ সাল শুরুর পর থেকে টানা পাঁচ মাস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর জুনেই প্রথমবারের মতো কমে এল খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক।
চলতি বছরের জুনে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচকের অবস্থান ছিল ১৭৩ দশমিক ২ পয়েন্ট, যা আগের মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জুনে এ সূচকমান ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি ছিল। দুই মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম নিম্নমুখী। তবে ভুট্টার দাম পাঁচ মাস ধরে চাঙ্গা রয়েছে। খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মূল্য বাড়াতে এটাই প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা কাটিয়ে চালের দামও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।
গত মাসে চিনির বাজারেও ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেছে। এ সময় চিনির বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৮৩ দশমিক ৩ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। মার্কিন ডলারের বিপরীতে থাই মুদ্রা বাথ ও ব্রাজিলীয় মুদ্রা রিয়ালের মূল্যবৃদ্ধির জের ধরে চিনির বাজার অনেকটা চাঙ্গা ছিল। অন্যদিকে ইউরোপে চিনি উৎপাদনে মন্দা ভাব পণ্যটি দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
একই সময় বিশ্বব্যাপী আমিষপণ্যের গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৬ পয়েন্টে। আফ্রিকাজুড়ে সোয়াইন ফ্লুর প্রকোপ আমিষপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে চলতি বছরের জুনে ভোজ্যতেল ও দুগ্ধপণ্যের বাজারে মন্দা ভাব বজায় ছিল। এ সময় ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচকের অবস্থান ছিল ১২৫ দশমিক ৫ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ কম। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর এটাই আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের সবচেয়ে কম দাম। রফতানি চাহিদা কম থাকায় এ সময় পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম অনেকটাই কমে গেছে। তবে জুনে সূর্যমুখী ও সরিষা তেলের বাজার তুলনামূলক চাঙ্গা ছিল।
অন্যদিকে গত মাসে দুগ্ধপণ্যের দামে সবচেয়ে বড় পতন দেখা গেছে। এ সময় দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৯৯ দশমিক ২ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৯ শতাংশ কম। চলতি বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দুগ্ধপণ্যের গড় দাম কমল। এ পতন খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচককে নিম্নমুখী করে তুলেছে।