ইতিহাস: ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ৫, ১০, ২৫ এবং ৫০ পয়সা মূল্যের ধাতব মুদ্রার প্রচলন করা হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে ১ পয়সা এবং তারও পরে ১৯৭৫ সালে ১ টাকা মূল্যের ধাতব মুদ্রা প্রবর্তন করা হয়। অতঃপর ২টাকা মূল্যের ধাতব মুদ্রা প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে ৫টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রাও প্রচলিত আছে।
ভাষাবিদগণের মতানুসারে টাকা শব্দটি সংস্কৃত টঙ্ক শব্দ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ রৌপ্যমুদ্রা। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের মুদ্রার নাম টাকা রাখে। পরবর্তীতে টাকার সংকেত হল ট নির্ধারন করা হয়। এক টাকার শতাংশকে পয়সা নামে অভিহিত করা হয়। অর্থাত্ এক টাকা সমান ১০০ পয়সা। বাংলাদেশে ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকা মূল্যমানের কাগজে টাকা প্রচলিত আছে। ১০০০ টাকা মূল্যমানের কাগজে নোট ২০১১ সালে প্রবর্তিত হয়। এছাড়া ১ পয়সা, ২ পয়সা, ৫ পয়সা, ৫০ পয়সা প্রচলিত ছিল; বর্তমানে ১ টাকা, ২ টাকা এবং ৫ টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্যা প্রচলিত আছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ নামে পরিচিত। ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ টাকার কাগজে নোট মুদ্রণ এবং মুদ্রা পস্তুতকরণ এবং তা বাজারে প্রচলনের জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত।
উপহাস: ২ নভেম্বর ২০১৫ ইং তারিখ ভোরে কমলাপুর রেল স্টেশনে আমার ছোট বোন, ‘মনি’ ডাক নাম; তাকে নিয়ে ট্রেনের প্রতীক্ষায় বসে আছি। ছোট বোন মনি যাবে চট্টগ্রাম ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিতে। নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা আগে আসার অপেক্ষমান সময়টুকুর ফাঁকে ছোটবোনকে বাংলাদেশের ট্রেন ভ্রমণ এবং স্টেশনের সর্তকতা সর্ম্পকে অবহিত করছিলাম। সে সময় একজন মধ্যবয়ষ্ক ভিক্ষুক জরাজীর্ণ ছেঁড়া বস্ত্র পরিহিত কুঁজো হয়ে হেলে-দুলে হাত পাতছে। রোগা শুকনো মলিন মুখখানি চুল-দাঁড়ি একাকার। দেখে মনে হলো সে প্রকৃত ভিখারি নয়। যাইহোক; আমার পকেটে ভাংতি টাকা বলতে ১ টাকার দু’টি কয়েন পড়ে আছে। প্রথমে ভাবলাম কয়েন দু’টি দিয়ে দেই। পরক্ষণেই মনে হলো একটি কয়েন দিয়ে দেখি ভিক্ষুকের প্রতিক্রিয়া কি দাঁড়ায়। যেই ভাবা সেই কাজ। একটি কয়েন ভিক্ষুকের হাতে দিলাম। তিনি কয়েনটি উল্টে-পাল্টে দেখলেন। তারপর; নিরবে নিঃশব্দে আমার সামনে কয়েনটি ফেলে দিয়ে তিনি অন্যদিকে হাত পাতলেন। আমার আশে-পাশে ট্রেনের জন্য অপেক্ষমান কিছু যাত্রি বিষয়টি লক্ষ্য করলেন। অনেকে অনেক মন্তুব্য করলেন। আমি নির্বিকার, ভিক্ষুক নিরব। তার চলে যাওয়ার পথের দিকে আমি তাকিয়ে আছি।
ততক্ষণে ভিক্ষুকের মনের ক্ষোভ আমাকে জানান দিচ্ছে- ‘আমি ভিক্ষুক হতে পারি কিন্তু আমি এক টাকার ভিক্ষুক নই’। আরে ভাই সবাইতো ভিক্ষুককে খুচরা পয়সাই দেয়, আমিও দিয়েছি তাতে দোষের তো কিছু দেখছি না। অনেক ভিক্ষুককে দেখি তারা ভাত খাওয়ার জন্য পাঁচ টাকা, দশ টাকা চেয়ে নেয়। তুমিতো আমার কাছে পাঁচ টাকা, দশ টাকা চাওনি। তাহলে আমি কি করে বুঝবো তুমি এক টাকার ভিক্ষুক নও। ভিক্ষুকের প্রতিচ্ছায়া আমার চোখের সামনে থেকে বিদেয় হল।
আমার এক টাকা সমমূল্যর কয়েনটি ভিখারি উপহাস করে আমাকে ফিরিয়ে দিল। আমি কয়েনটি তুলে নিলাম এবং সযত্নে আমার জিন্স প্যান্টের পকেটে পুরে রাখলাম। কয়েনটি ভিখেরির কাছে মূল্যহীন হলেও আমার কাছে এটার মূল্য আছে।
কিছুদিন যাবত্ জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো আমাদের দেশের এই অকেজো ধাতব মুদ্রা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন ছাপছে। এসব প্রতিবেদনে উঠে আসছে- ‘কয়েন নিয়ে ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে’ সারাদেশে বিভিন্ন ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড়-বড় ব্যবসায়ীদের নিকট মজুত হয়ে পড়ে আছে লাখ-লাখ অকেজো অলস ধাতব মুদ্রা। এসব মূল্যবান ধাতব মুদ্রা ব্যাংকও নিতে চাচ্ছে না বা নেয় না।
সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘কারেন্সি ম্যনেজমেন্ট বিভাগ’ থেকে জারিকৃত এক সার্কুলারে সকল ব্যাংক শাখাকে গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েন নিতে বলা হয়েছে।