এবছর সারাদেশে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান উৎপাদনের ফলে বেড়েছে চাল উৎপাদনও। এর পরও ভারত থেকে খাদ্যপণ্যটির আমদানি কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে তিন লাখ টনের বেশি চাল আমদানি হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এ স্থলবন্দর দিয়ে খাদ্যপণ্যটির আমদানি ৪৪ হাজার টনে নেমে এসেছে। এর মধ্যে গত জুনে এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনো চাল আমদানি হয়নি। মূলত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে চালের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর কারণে হিলির আমদানিকারকরা খাদ্যপণ্যটির আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ১ হাজার ২৫০টি ট্রাকে সব মিলিয়ে ৪৪ হাজার ২৮৪ টন চাল আমদানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৮ হাজার ৩১২টি ট্রাকে মোট ৩ লাখ ৮ হাজার ১৮১ টন চাল আমদানি হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ভারত থেকে চাল আমদানি কমেছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৯৭ টন।
মাসভিত্তিক হিসাবে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারত থেকে সব মিলিয়ে ৭৯ হাজার ৪৬৩ টন চাল আমদানি হয়েছিল। পরের মাসে খাদ্যপণ্যটির আমদানি কমে দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৭৬০ টনে। মার্চে এ স্থলবন্দর দিয়ে মোট ৫২ হাজার ১২১ টন চাল আমদানি হয়েছিল। এপ্রিলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৯৬১ টনে। মে মাসে এসে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মোট ৪৬ হাজার ৫৭৬ টন চাল আমদানি হয়েছিল। আর জুনে এসে হিলির আমদানিকারকরা মোট ১৮ হাজার ৩০০ টন চাল আমদানি করেছিলেন।
অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৮৯৪ টন চাল আমদানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যটির আমদানি কমে দাঁড়ায় ৮ হাজার ১১৬ টনে। মার্চে হিলির আমদানিকারকরা ৮ হাজার ৮৫৭ টন চাল আমদানি করেছেন। এপ্রিলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৭৭ টনে। গত মে মাসে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মোট ৬ হাজার ২৪০ টন চাল আমদানি হয়েছে। তবে জুনে এ স্থলবন্দর দিয়ে কোনো চাল আমদানি হয়নি।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক মামুনুর রশিদ লেবু বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা চালের জন্য পুরো দেশের কাছে হিলি স্থলবন্দর সুপরিচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জের ধরে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট এড়াতে ২০১৭ সালের ২০ জুন চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল সরকার। ওই সময় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি গতিশীল হয়ে ওঠে। পরে শুল্কহার ২ শতাংশে নামিয়ে আনলে এ স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি আরো বেড়ে যায়। তবে ধান-চালের বাম্পার ফলনের কারণে খাদ্যপণ্যটি আমদানির যৌক্তিকতা নিয়ে দেশে বিতর্ক শুরু হয়। গত অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যমান শুল্কহার বাড়িয়ে ফের ২৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এ সময় থেকে কমতে শুরু করে চালের আমদানি। এরপরও বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভারত থেকে ৪৪ হাজার ২৫০ টনের বেশি চাল আমদানি হয়েছে।
আমদানিকারক হারুনুর রশীদ হারুন বলেন, দেশের বাজারে বাড়তি উৎপাদনের পরও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত ছিল। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পণ্যটির আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশের বেশিতে উন্নীত করায় গত জুনে হিলির আমদানিকারকরা ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। মূলত বাড়তি শুল্কের কারণে পড়তা না পড়ায় হিলির আমদানিকারকরা লোকসান এড়াতে ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন না।
হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বাজারে চাহিদা ও লাভ থাকায় ২৮ শতাংশ আমদানি শুল্কের আওতায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশীয় আমদানিকারকরা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৪৪ হাজার টনের বেশি চাল আমদানি করেছেন। প্রতিদিন ১৫-২০ ট্রাক চাল দেশে ঢুকেছে। তবে আমদানি শুল্ক ৫০ শতাংশের বেশি হওয়ায় জুন থেকে চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে।