ঘটনা -১: মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১ টা সিদ্ধেশ্বরী মনোয়ারা হাসপাতালের সামনে থেকে বউ বাচ্চাসহ উবারের গাড়িতে উঠলাম। গন্তব্য ভাড়া বাসা নামের পায়রার খোপ খিলগাঁও। যাই হোক বেইলি রোড ক্রস করে ফ্লাইওভারে উঠতেই ড্রাইভার বলল স্যার পদ্মানদীতে আর কয়টা কল্লা লাগবো জানেন? আমি রীতিমত হতভম্ব। সামনের সিটে বসা আমার বড় ছেলে কল্প বলল বাবা কল্লা কি জিনিস। আমি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য নীরব থাকলাম। ছেলেকে বললাম বাবা গাড়িতে একটু ঘুমাও। সকালে স্কুল আছে। গাড়ি চালক আবারো বলল স্যার আমাদের ভোলায় তো সব স্কুল বন্ধ করে দিছে। বললাম কেন? তার উত্তর প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলে দেওয়া হয়েছে সাতজন করে দিতে হবে। জানতে চাইলাম কি দিতে হবে? উত্তরে সে বলল ঐ যে পদ্মাসেতুর জন্য মাথা লাগবে। সে আরো বলল আজ সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর থেকে সাতজনকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি বললাম এসব গুজব। আর কোথাও বলবেন না। চালক স্সিত হেসে বলল স্যার আমারে বোকা ভেবেছেন। আমি বললাম তা না। হুজুগ! এবার সে একটু মাইন্ড করেছে মনে হল। বললাম এসব চিন্তা না করে গাড়ি চালান। পৌনে ১২ টারদিকে বাসার সামনে নামার সময় ভাড়া মিটিয়ে গেটের ভেতরে ঢুকবো ঠিক তখন চালকটি বলল স্যার ঘটনা কিন্তু সত্যি আপনার ছেলেটাকে কালকে স্কুলে দিয়েন না। আমি কোন জবাব না দিয়ে ভেতরে চলে আসলাম। অথচ সেতু বিভাগ এটা নিয়ে বার বার বলে যাচ্ছে এটা গুজব।
ঘটনা-২: ভারত পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে সামনে কোরবানির ঈদ এই গুজবে পেয়াজের দাম গত সাত দিনে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কাল বাজারে গিয়ে জানলাম শ্যামবাজার ছাড়া রাজধানীর কোন আড়ৎ কিংবা পাইকারি বাজারে পেয়াজ নেই কারণ ভারত থেকে পেয়াজ আসছে না। অথচ ভারত তো পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেনি। আর করলেই বা কি! আজকে যেটার এলসি খোলা হয় সেটা তো বাজার পর্যন্ত আসতে অন্তত ১ বা ৩ মাস লেগে যাবে। তার মানে আজকে আমদানি বন্ধ হলেও এর প্রভাব পড়ার কথা তিন মাস পর। কিন্তু সেটা কি হয়েছে। পেয়াজের গুদামগুলোতে নিশ্চই টনকে টন পেয়াজ মজুদ আছে। নিশ্চই তাহলে এখানে একটা হুজুগিপনা আর অসসতা কাজ করছে। যা হয়তো গুটি কয়েক ব্যবসায়ী বা আমদানিকারক এটা করছে।
এবার আসুন কোন ঘটনার কথা না বলে প্রধানমন্ত্রীর একটি উদৃতি নিয়ে কথা বলি। তিনি বলেছেন উন্নয়ন চাইলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মানতে হবে। হ্যাঁ মানতে তো হবেই। কেননা এ দেশে জনগনের দাবি সর্বদাই উপেক্ষিত।
সাধারন মানুষের কথা ভাবার সময় আমাদের নেই। কেননা এ দেশে অসাধারনের সংখ্যা অনেক বেশি।দলের প্রধান থেকে ওয়ার্ডের নেতা। ছিচকে নেতা, পাতি নেতা সবাই অসাধারণ। সরকারি অফিসের সচিব থেকে, পিয়ন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক থেকে তার চৌদ্দ গোষ্ঠী, বাস মালিক থেকে শ্রমিক নেতা সবাই ক্ষমতাধর। অক্ষম শুধু পাবলিক। এই আমজনতা শুধুই দর্শক। ফলে দাম বাড়লে তাদের কথা ভাবার কেউ নেই।
আচ্ছা উন্নয়নের জন্য দাম বাড়বে মেনে নিলাম। তাহলে তো তার ফিরতি দিতে হবে তাই না। ধরুন গত ১৫/২০ বছরে বাস ভাড়া বেড়েছে ১৫ বার কিন্তু যাত্রীসেবা কি বেড়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে কিন্তু সংকট কি কেটেছে। এখনো রাজধানীর বহু এলাকায় গ্যাসের জন্য হাহাকার চলে। ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে কিন্তু সে পানি কি পান করা যায়। ময়লা কি কমেছে। বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণ হয়েছে কিন্তু লোডশেডিং কি বন্ন্ধ হয়েছে। প্রত্যেক এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং টেক্স বেড়েছে কিন্তু নিরাপত্তা কতখানি বেড়েছে। সেবাই বা কতটা বেড়েছে। মোবাইল ফোনের কলরেট বেড়েছে কিন্তু কলড্রপ কি থেমেছে। ইন্টারনেটের দাম বেড়েছে কিন্তু সে হারে কি গতি বেড়েছে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের দাম বেড়েছে কিন্তু ভেজাল কি কমেছে একটুও। গাড়ি বেড়েছে, চালক বেড়েছে রাস্তা বেড়েছে, রাস্তার নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে কিন্তু রোড এক্সিডেন্ট কি কমেছে। মানুষ তো বেহিসাব মারা যাচ্ছে। পুলিশের বরাদ্দ বেড়েছে সরকারি চাকুরেদের বেতন বেড়েছে কিন্তু দুর্নীতি কি কমেছে?
এবার আসুন ভাবি আইন বেড়েছে, সাজা বেড়েছে কিন্তু ধর্ষণ কি কমেছে না বেড়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে কিন্তু ব্যয় তার চেয়ে কত বেশি বেড়েছে তা কি ভেবেছে কেউ। মানুষের আয়ু বেড়েছে কিন্তু মানবিকতা কি বেড়েছে। নিত্য নতুন ওষুধ বেড়েছে মশা মারার বরাদ্দ বেড়েছে কিন্তু ডেংগু কি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এক মাসেই ডেংগু রোগি বেড়েছে পাচ গুণ। তাহলে উন্নয়নটা কোথায়? প্রশ্নটা আসতেই পারে।
এবার চোখ খুলে তাকান বড় বড় ফ্লাইওভার, চারলেনের রাস্তা, বড় বড় সেতু, উঁচু উঁচু ভবন, নতুন রেল, বাড়ি বাড়ি পাকা আধা পাকা পায়খানা, সমুদ্রসীমা অর্জন, বিদেশে নেতাদের বাড়ি, পাতি নেতাদের নতুন নতুন গাড়ি এসব কি উন্নয়ন নয়?
এছাড়া ফুটপাতে পুলিশ বক্স, রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ কার্যালয়, ফুটপাতে টাইলস, টাইলসের ওপর ডাস্টবিন। আগে তো ডাস্টবিন ছিল রাস্তায়। এখন সেটা টাইলস লাগানো ফুটপাতে। আবার সেই ডাস্টবিন ঘেঁসে উন্নত যাত্রী ছাউনি। আরে ভাই একদিনে তো সব হবে না। সময় তো দিতে হবে। দেশটা তথা ঢাকা কি একদিনে লাসভেগাস আর লসএঞ্জেলস হয়ে যাবে এটা ভাবেন কেন?
আপনি কি একদিনে বড় হয়েছেন। নয়ন বন্ডরা কি একদিনেই সাব্বির আহমেদ থেকে নয়ন বন্ড ( জেমস বন্ড) বনে গেছেন?
মানিক মুনতাসির
লেখক ও সাংবাদিক
এর সাথে প্রতিষ্ঠানের কোন সম্পর্ক নেই। এটা লেখকের একান্ত মতামত।