বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র (আইসিডিআরবি) এই চার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার করাতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
লাইসেন্সধারী সব কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা শেষে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী সাতদিনের মধ্যে আদালতে জমা দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুধে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে রোববার (১৪ জুলাই) বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রোববার সকালে রিটের শুনানি শুরু হয়। দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা রোববার (১৪ জুলাই) দুপুর দুইটার মধ্যে জানাতে বিএসটিআইয়ের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
রোববার দুপুরে মধ্যহ্নবিরতির পর আবার শুনানি শুরু হয়।
শুনানি শেষে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন, ওই চার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে স্বাধীনভাবে দুধের নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। এক্ষেত্রে বিএসটিআই এই সমন্বয় করবে। তবে নিজ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজার থেকে লাইসেন্সধারী কোম্পানির দুধের নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
আদালতে বিএসটিআইয়ের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এম আর হাসান মামুন। রিটের পক্ষে শুনানি অনীক আর হক।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট দুধের ১০ ধরনের নমুনার ওপর দুই দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। দুধের সবগুলো নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি মেলে।
এছাড়া পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণা প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশ পাস্তুরিত দুধেই ভেজাল ধরা পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
এই রিট আবেদনে গত বছরের ২১ মে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি করে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। খাদ্য ও স্বাস্থ্য সচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে দেওয়া এই নির্দেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
বিএসটিআই-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, চৌদ্দটি কোম্পানির পাস্তরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। কিন্তু একইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার এক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে যে, পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার কোনোটিতেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার ‘সলিড নট ফ্যাট’ পাওয়া যায়নি।
বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দুধে ‘ফ্যাট ইন মিল্ক’ তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও এগুলোতে আছে তিন দশমিক ছয় থেকে তিন দশমিক ৬১ শতাংশ। এসব দুধে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর।