বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে কিছুদিন ধরেই কৃষিপণ্যের দামে চাঙ্গা ভাব বিদ্যমান রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সপ্তাহে শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) গম, ভুট্টা ও সয়াবিন তিনটি কৃষিপণ্যের গড় দামই আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে কৃষিপণ্যের বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। খবর সিনহুয়া ও এগ্রিমানি।
সিবিওটিতে সর্বশেষ সপ্তাহে গমের গড় দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় সেপ্টেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি বুশেল (৬০ পাউন্ড) গমের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৫ ডলার ২৩ সেন্টে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় বুশেলে ৮ সেন্ট বেশি।
গত সপ্তাহে কৃষিপণ্যের সর্বশেষ মাসভিত্তিক চাহিদা-জোগান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারতসহ কয়েকটি দেশে খরা পরিস্থিতি বিরাজ করায় ২০১৯-২০ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক মজুদ প্রাক্কলনের তুলনায় ৭৯ লাখ টন কমে আসতে পারে। এ সময় গমের বৈশ্বিক মজুদ দাঁড়াতে পারে ২৮ কোটি ৬৫ লাখ টনে। এ খবরে কৃষিপণ্যটির সাপ্তাহিক গড় দাম বেড়ে গেছে।
ভুট্টার দামের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। সর্বশেষ সপ্তাহে সিবিওটিতে কৃষিপণ্যটির গড় দাম বেড়েছে বুশেলে ১৭ সেন্ট। এ সময় ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি বুশেল ভুট্টা গড়ে ৪ ডলার ৫৯ সেন্টে বেচাকেনা হয়েছে। সে হিসাবে আগের সপ্তাহের তুলনায় সর্বশেষ সপ্তাহে ভুট্টার গড় দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ওকলাহোমা, কানসাস, ইলিনয়, মিসৌরিসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর জের ধরে এসব অঞ্চলে ভুট্টার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ আশঙ্কা কৃষিপণ্যটির দাম বাড়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। বিদ্যমান খরা পরিস্থিতি আরো দীর্ঘমেয়াদে থাকলে আগামী দিনগুলোয় সিবিওটিতে গম ও ভুট্টার দাম বর্তমানের তুলনায় আরো বাড়তে পারে।
এদিকে গম ও ভুট্টার পাশাপাশি সর্বশেষ সপ্তাহে সিবিওটিতে সয়াবিনের দামও আগের তুলনায় চাঙ্গা হয়েছে। এ সময় কৃষিপণ্যটির সাপ্তাহিক গড় দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ ধারাবাহিকতায় সপ্তাহ শেষে সিবিওটিতে প্রতি বুশেল সয়াবিনের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৯ ডলার ৩১ সেন্টে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় বুশেলপ্রতি ৩৭ সেন্ট বেশি। সর্বশেষ সপ্তাহে গম ও ভুট্টার তুলনায় সয়াবিনের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ছিল।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন রফতানি আগের প্রাক্কলনের তুলনায় ৭ কোটি ৫০ লাখ বুশেল কমে ১৮৭ কোটি ৫০ লাখ বুশেলে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত দেশটির সয়াবিন উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোয় তীব্র খরার কারণে মৌসুম শেষে কৃষিপণ্যটির রফতানিতে মন্দা ভাব দেখা যেতে পারে।
তবে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের লাগাম টানতে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলমান থাকায় সংকট নিরসনের আশা করছেন মার্কিন রফতানিকারকরা। এ সম্ভাবনা থেকেই চাঙ্গা হয়েছে সয়াবিনের সাপ্তাহিক বাজার।