দেশের নামী-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ভালো শিক্ষকদের পাঠদানের উপকারিতা যাতে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দেয়া যায় তার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।সেজন্য একটি টেলিভিশন চ্যানেল খুলে তাদের ক্লাস সম্প্রচারের পরিকল্পনা করছে সরকার বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যঅধিবেশনে ডিসিরা ভালো শিক্ষকদের অতিথি করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানোর প্রস্তাব তুললে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সরকারের এই ভাবনার কথা জানান।
এসময় মন্ত্রী বলেন, “ঢাকায় বা বেশ কিছু জায়গায় অত্যন্ত ভালো কিছু বিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলোর অনেক সুনাম রয়েছে, সেখানকার শিক্ষকদের বিষয়ে অনেক সুনাম রয়েছে। (ডিসিদের) একটা প্রস্তাব আছে তাদেরকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে।
“আমরা যেটি (ডিসিদের) বলেছি- খুব কম খরচের মাধ্যমে টেলিভিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের খুব ভালো ভালো শিক্ষকদের ভালো ভালো ক্লাসগুলোকে কিন্তু আমরা একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একইসঙ্গে সব স্কুলে দেখাতে পারি।
“সেজন্য একটা শিক্ষা টিভি জাতীয় কোনো কিছু চিন্তা করা যায় এবং সেটি করা গেলে হয়ত যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষক আছেন, তারা অন্যদের শেখানোর পদ্ধতি থেকে উপকৃত হবেন এবং একই সঙ্গে শিক্ষার্থীও যে যেখানেই থাকুক, একই মানের শিক্ষকদের শিক্ষাদান, পাঠদানে তারা উপকৃত হবে।”
শিক্ষা টিভি করবেন কিনা- জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, “এ বিষয়ে এখানে কথা বললাম, এরকম একটা কিছু হতে পারে। সেটি নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করব এবং আগামী দিনে কী পরিকল্পনা করা যায় সেটি দেখব।”
একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ডিসিদের প্রস্তাবের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রস্তাব আসলে কী করা যায়, কীভাবে করা যায় সেটা ভেবে দেখব।”
শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সব জায়গায় কতগুলো দক্ষতা অর্জন করা জরুরি মত দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলা ও ইংরেজি পড়তে, লিখতে, বলতে ও শুনতে পারছে কিনা; গণিত, বিজ্ঞান, আইসিটি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসহ সাধারণ যে দক্ষতা অর্জন করা দরকার সেটুকু তারা যেন শিখতে পারে।
“মূল্যবোধগুলো যেন প্রাথমিক থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রোথিত করে দিতে পারি, যেন তারা ভালো মানুষ হতে পারে, সুনাগরিক হতে পারে- এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা, নোট বা গাইড বই যেন একেবারেই না থাকে, খেলার মাঠ যেন নষ্ট না হয়।”
শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির বিষয় সজাগ দৃষ্টি রাখতে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বোত্র জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় সংগীত গাওয়া, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করাসহ যত বিষয় শিক্ষার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, যেখানে ডিসিদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়েছি।”
সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে যে কোটার কথা বলেছেন সে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে দীপু মনি বলেন, “একটি নিয়ম আছে- সরকারি কর্মকর্তারা যদি কোথাও বদলি হয়ে যান তাদের সন্তানরা সেখানকার সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে, ফলে কোটা সংরক্ষণের কোনো বিষয় নেই।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে কোটা রয়েছে, যেটি খুব একটা ব্যবহার হয় না বলে জানান তিনি।
তাহলে ওই কোটা উঠিয়ে দেবেন কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বিচার-বিবেচনা করে দেখতে পারি আদৌ প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা।
“ডিসিরা বেশ কিছু লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন, সময়ের অভাবে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারিনি। সেগুলো দেখে তার মধ্যে যেগুলোতে কাজ করা দরকার বলে মনে করব সেগুলো আমরা করব।”