বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। তবে এক্ষেত্রে জুড়ে দেয়া হয়েছে বেশকিছু শর্ত। এর ফলে রাজ্যটি থেকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে জ্বালানি পণ্যটির আমদানিতে বিদ্যমান জটিলতা সহসাই দূর হচ্ছে না বলে মনে করছেন দেশীয় আমদানিকারকরা। ফলে ঝুলে থাকবে কয়লা আমদানির জন্য এরই মধ্যে খোলা শতকোটি টাকার লেটার অব ক্রেডিট বা এলসিগুলোও।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কারণে ভারতের মেঘালয়ের খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন দেশটির উচ্চ আদালত। এরপর ২০১৪ সালে উত্তোলিত কয়লা রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশে ভারতীয় কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। রফতানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফায় আগেই উত্তোলিত কয়লা রফতানির অনুমতি দেন ভারতীয় আদালত। তবে বেঁধে দেয়া হয় সময়সীমা। নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ায় এখন ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে।
সর্বশেষ ১৭ মে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট মেঘালয় রাজ্যের খনিগুলো থেকে আগেই উত্তোলিত কয়লা ৩১ মে পর্যন্ত রফতানির অনুমতি দেন। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মে থেকে সুনামগঞ্জের বড়ছড়া ও বাগলী সীমান্ত দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু হয়। ৩১ মের পর ফের বন্ধ হয়ে যায় আমদানি। এরপর পুনরায় কয়লা রফতানির অনুমতি চেয়ে ভারতীয় রফতানিকারকরা ফের উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
আপিল আবেদনের জের ধরে ২ জুলাই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শর্তসাপেক্ষে কয়লা উত্তোলন ও রফতানির অনুমতি প্রদান করেন। তবে এ অনুমতিতেও আশার আলো দেখছেন না বাংলাদেশের আমদানিকারকরা। কয়লা উত্তোলন ও রফতানির ক্ষেত্রে যেসব শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ভারতীয় আদালত, তা পূরণ করতে আরো কয়েকমাস চলে যাবে বলে ধারণা তাদের। এতে দেশীয় আমদানিকারকদের আটকা পড়া প্রায় শতকোটি টাকার এলসি নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, আপাতত তার কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি চন্দন সাহা জানান, মেঘালয়ের খনিগুলো থেকে শর্তসাপেক্ষে কয়লা উত্তোলন ও রফতানির অনুমতি দিয়েছেন ভারতীয় আদালত। তবে এক্ষেত্রে বেঁধে দেয়া শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে কোনোভাবে পরিবেশের ক্ষতিসাধন করা যাবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেই কয়লা উত্তোলন ও রফতানি করতে হবে। এজন্য মেঘালয় সরকার ও ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) যৌথভাবে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি সাপেক্ষেই কয়লা উত্তোলন করা যাবে।
চন্দন সাহা বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দেয়া শর্ত পূরণ করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি পেতে তিন-চার মাস লাগবে বলে তাদের অবগত করেছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। তাই আপাতত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের। ঝুলে থাকা এলসিগুলো নিয়েও এখনই চূড়ান্ত কোনো সমাধানে পৌঁছানো যাচ্ছে না।
সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপ জানিয়েছে, সিলেট সীমান্ত দিয়ে মেঘালয় থেকে কয়লা আমদানির জন্য দেশীয় আমদানিকারকরা প্রায় ১৫০ কোটি টাকার এলসি খুলে রেখেছে। গত ১৭-৩১ মে পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকার কয়লা আমদানি হয়েছে। বাকি ১০০ কোটি টাকার এলসি এখনো আটকে আছে। অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এলসি করেছেন। কিন্তু কয়লা আমদানি করতে না পেরে ঋণের সুদের বোঝা তাদের টানতে হচ্ছে। এছাড়া পুনরায় আমদানি শুরু না হলে এ শতকোটি টাকার এলসির মধ্যে শুল্ক ও এআইটি বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যবসায়ীরা ফেরত পাবেন না। এতে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞা জারির আগে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন খনি থেকে প্রতিদিন সিলেট বিভাগের তামাবিল, বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১০ হাজার টন কয়লা আমদানি হতো। দেশের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশই পূরণ করত ভারত থেকে আমদানি করা এসব কয়লা দিয়ে।