ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যে সকল অভিবাসী আছে তাদের শনাক্ত করে তাড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার তিনি এমন কথা বলেছেন বলে বার্তা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।
এর ফলে সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার তৎপরতাসহ নতুন করে ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি হবে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।
উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মুসলমান সংখ্যালঘুদের শনাক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী সরকার এটাকে নতুন উদ্যম দিয়েছে।
চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের আলোচনার অন্যতম একটি ইস্যু ছিল এই অভিবাসী বিতাড়ন। এই প্রচার দিয়েই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদি।
পার্লামেন্টে অমিত শাহ বলেন, আসামে নাগরিক পঞ্জি নিয়ে যা হচ্ছে, সেটাকে কখনোই সীমিত করে দেবে না সরকার। বরং এছাড়া অন্যান্য রাজ্যের অবৈধ অভিবাসীদের প্রতিও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, বিদ্যমান আইন মেনে দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানো হবে।
ভারতের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কট্টর হিন্দুত্ববাদিতার জন্যই পরিচিত। আগামীতে তিনিই প্রধানমন্ত্রী মোদির স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে আশঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচনী প্রচার অভিযানে অভিবাসীদের ঘুণপোকার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, তারা আসামের সম্পদকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির(বিজেপি) মুসলিমবিদ্বেষের শিকড় খুবই গভীরে গেঁথে গেছে। মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
তাদের মতে, মূলত মুসলমানদের প্রান্তিকীকরণ করতেই দেশটির সরকার এতোসব আয়োজন করে যাচ্ছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যখন কঠোর পদক্ষেপ জোরদার হচ্ছে, তখন পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে নিপীড়িত হয়ে আসা সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব সহজতর করতে একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছে ভারত সরকার।
সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনা অনুসারে আসামের নাগরিক পঞ্জি প্রস্তুতে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে আসামের লোকজন আদাজল খেয়ে চেষ্টা করছেন। আগামী ৩১ জুলাই এই তালিকা প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
নাগরিকত্ব নিবন্ধনের একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে। এতে আসামের তিন কোটি ১০ লাখ লোকের মধ্যে ৪০ লাখকেই অবৈধ বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর আশঙ্কা, সরকারের এই পদক্ষেপে বহু সংখ্যালঘু দরিদ্র মুসলমানের রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া উ্ত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলোও এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছে। নাগরিক ও অনাগরিকদের একটি তালিকা তৈরি করতে মিজোরাম রাজ্যে গত মার্চে একটি আইন প্রণয়ন হয়েছে। পার্শ্ববর্তী নাগাল্যান্ডও সেই পথে হাঁটছে।