সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে শিল্প মন্ত্রণালয় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোর অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থের শতকরা ৯৯.৩০ ভাগ ব্যয়ে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় অগ্রগতির হার শতকরা ৯৪ দশমিক ৩২ ভাগ। উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ অগ্রগতির হার ছিল ৭৫.৪২ ভাগ।
আজ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শিল্প সচিব মোঃ আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এম.পি প্রধান অতিথি ছিলেন। সভায় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কর্পোরেশনের প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট ৫৩টি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ০৪টি কারিগরি এবং ০১টি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্প রয়েছে। সব মিলিয়ে এসব প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবিখাতে ১ হাজার ৩০ কোটি ১ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্যখাতে ৫৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নখাতে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল।
সভায় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের অভিজ্ঞতার আলোকে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়। এছাড়া, প্রকল্প সম্পর্কিত সমস্যাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি, অর্থছাড়, দরপত্র আহবান, কেন্দ্রিয়ভাবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন তদারকি, সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের পিপিআর সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ, প্রকল্প এলাকায় অবস্থান নিশ্চিতকরণ এবং প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতির চিত্র গণমাধ্যমে তুলে ধরার নির্দেশনা দেয়া হয়।
সভায় নরসিংদী জেলার পলাশে বাস্তবায়নাধীন ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং সর্বোচ্চ দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দ্রুত এর বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সাথে তিনটি কেমিক্যাল পল্লি নির্মাণ প্রকল্প, এপিআই শিল্প পার্ক, সাভার চামড়া শিল্পনগরিসহ অন্যান্য অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর গুণগতমান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নে সফল কর্মকর্তাদের পুরস্কারের পাশাপাশি ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, যেসব প্রকল্প পরিচালক ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করেছেন বলে প্রতীয়মান হবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরাতন ধ্যান-ধারণা পরিহার করে মন্ত্রণালয়ের কর্ম সম্পাদন গতির সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করার জন্য প্রকল্প পরিচালকদের প্রতি আহবান জানান।
শিল্পসচিব বলেন, যৌথ উদ্যোগে গৃহিত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা মাফিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহে তৎপর থাকতে হবে। অর্থবছরের শেষ দিকে মে ও জুন মাসে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। তিনি চলতি অর্থবছরে কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য মাথায় রেখে কাজ করতে প্রকল্প পরিচালকদের নির্দেশনা দেন। আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে অসত্য তথ্য পরিবেশন করে কোনো মহল যাতে চামড়া ও লবণ নিয়ে কোনো ধরণের অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টি না করতে পারে, সেজন্য এখন থেকেই এ বিষয়ে বাস্তব তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরতে তিনি বিসিকের প্রতি নির্দেশনা দেন।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিঃ (জেমকো) এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিঃ এর মধ্যে লিজ দলিল স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় শিল্পমন্ত্রী, শিল্প এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব, উভয় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন