খাতুনগঞ্জে বেড়েছে মোটা চালের দাম

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৭-২৩ ১১:৫০:৩৬


দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বেড়েছে মোটা চালের দাম। বিভিন্ন চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে চালের দাম বেড়েছে মানভেদে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় মজুদ বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও আনা-নেয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় খাদ্যপণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি চাল আড়তগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা সেদ্ধ চালের দাম প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। এছাড়া বাড়তির দিকে রয়েছে অন্যান্য চালের বাজারদরও। দুই সপ্তাহ আগেও স্বর্ণা সেদ্ধ চালের দাম ছিল বস্তাপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০ টাকা। বর্তমানে এ চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তায় ১ হাজার ১০০ টাকা। পারি সেদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি ৬০-৭০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৬১০ থেকে ১ হাজার ৬২০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়া গুটি সেদ্ধ চাল প্রতি বস্তায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে বস্তাপ্রতি ১ হাজার ৪২০ থেকে ১ হাজার ৪৩০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। পাইকারি আড়ত পর্যায়ে চালের দাম বস্তাপ্রতি গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়ে। খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি আরো ১ থেকে ২ টাকা চালের দাম বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

অপরিবর্তিত থেকে আগের দামে বিক্রি হচ্ছে জিরাশাইল সেদ্ধ চাল, মিনিকেট আতপ ও মিনিকেট। জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। আর মিনিকেট আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯৫০ টাকা। মিনিকেট ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দামে চাঙ্গা রয়েছে পোলাওয়ের চাল। কোরবানির ঈদের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি দামে।  চিনিগুঁড়ার দাম প্রতি বস্তায় প্রায় ২০০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যার কারণে চাল সরবরাহকারী জেলাগুলো থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল আসতে পারছে না। এলেও পরিবহন ভাড়া প্রতি ট্রাক ৫-৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে, যা খাদ্যপণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী করে তুলছে। এছাড়া বন্যার্ত এলাকাগুলোয় চাল ব্যবসায়ীরা মজুদ বাড়িয়ে দেয়ায় মোটা সেদ্ধ চালের চাহিদা বেড়েছে, যার প্রভাব অন্যান্য চালের ওপরও পড়ছে বলে জানান তারা।

চট্টগ্রামের মেসার্স নিউ জুনায়েদ ট্রান্সপোর্টের স্বত্বাধিকারী মো. মনির হোসেন বলেন, ভারি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন সড়ক ভেঙে গেছে। ভাঙা ও নাজুক সড়কের কারণে যানজটে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সময় বেশি লাগছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমের কারণে পণ্যের লোডিং-আনলোডিংয়ে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আসন্ন কোরবানি ঈদের আগে পরিবহন ভাড়া কমানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, বন্যার কারণে চালের চাহিদা খুব বেশি না বাড়লেও আগের চেয়ে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। বিশেষত মোটা সেদ্ধ চালের চাহিদা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে চট্টগ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এসব এলাকায় চালের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন চাল উৎপাদনকারী জেলা থেকে পণ্য আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এর সঙ্গে বাড়তি পরিবহন খরচ যুক্ত হওয়ায় চালের বিক্রয়মূল্য বেড়ে গেছে।

চাক্তাইয়ের মেসার্স সততা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, চালের প্রকৃত দাম বাড়েনি। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে চালের ওপর। মোটা চালের দাম বাড়লেও সরু চালের চাহিদা আগের মতো থাকায় দামও বাড়েনি। তবে বন্যা দীর্ঘায়িত হলে সব ধরনের চালের দাম আরো কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

চট্টগ্রামের একাধিক পরিবহন এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাস আগেও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে চট্টগ্রামে আসতে চালভর্তি একটি ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের খরচ পড়ত ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে ভাড়ার পরিমাণ বেড়ে ৩৪ হাজার থেকে ৩৬ হাজারে উঠে গেছে। মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতির কারণে সময় বেশি লেগে যাওয়ায় চালকদের লাইন খরচ বেশি দিতে হচ্ছে। এতে মালিকরা লাভবান না হলেও ট্রিপ কমে যাওয়ায় ভাড়া বাড়াতে হয়েছে। এছাড়া আসন্ন কোরবানির ঈদে পণ্য আনা-নেয়া বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন সংকটও রয়েছে। সব মিলিয়ে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। আর পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারদরের ওপর।