কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছে লবণ আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট। এজন্য প্রাথমিকভাবে তারা বিসিকের লবণ উৎপাদন ও মজুদ সংক্রান্ত তথ্যকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এ চক্র একদিকে বিসিকের তথ্যকে অসত্য বলে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলকে বিভ্রান্ত করা চেষ্টা করছে। অন্যদিকে সমুদ্র পথে অবৈধভাবে লবণ আমদানি করছে। চাষিদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত রোববার চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ হাজার টনের লবণের জাহাজ আটক করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের স্থানিয় প্রশাসন অবৈধভাবে আসা ৫ ট্রাক লবণের চালান আটক করে। মিলমালিকদের এসব অপতৎপরতায় হুমকী মূখে পড়েছে স্থানিয় লবণ চাষিরা।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ লবণ মিল সমিতি ‘বিসিক’র তথ্য বিভ্রাট ও লবণ মিশ্রিত সোডিয়াম সালফেট আমদানি বন্ধকরণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ লবণ মিল সমিতির সভাপতি নুরুল কবির লবণ উৎপাদন ও মজুদ সংক্রান্ত বিসিকের দেয়া তথ্যকে বিভ্রান্তমুলক উল্লেখ করে বলেন, কয়েক বছর ধরে উৎপাদন ও চাহিদা নিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এবং দেশীয় লবণ শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির মধ্যে মত বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে বিসিকের নতুন চেয়ারম্যান চাহিদা ও উৎপাদন নির্ধারণ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই মনগড়া তথ্য দিয়ে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে। যেখানে ২০১৯ সালে লবণের কোনো ঘাটতি নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতি বলছি, লবণ মৌসুমে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কাঙ্খিত মাত্রায় লবণ উৎপাদন হয়নি। এছাড়াও মহেশখালী ও বাঁশখালীতে বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজনে লবণের মাঠ অধিগ্রহণ করায় লবণ উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। এই অবস্থায় এ বছরও লবণের ৪ থেকে ৬ লক্ষ টন ঘাটতি হতে পারে । কিন্তু বিসিক দাবী করেছে লবণের কোনো ঘাটতি নেই,যা সঠিক নয়। বিসিকের মনগড়া তথ্যের কারণে লবণ মিশ্রিত বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেট আমদানি হচ্ছে এবং দেদারসে খাবার লবণ হিসেবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে একদিকে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে অন্যদিকে দেশীয় লবণ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, লবণের নামে বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেট আমদানিকারকদের সুবিধা দেওয়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মুখোশ উন্মোচনের সময় এসেছে।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, লবণ আমদানি সিন্ডিকেটের সাথে তিনি জড়িত নয়। এছাড়া গত রোববার চট্রগামে আটককৃত ১০ টন লবণের জাহাজের সাথে তিনি জড়িত নন। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনটির সভাপতি নুরুল কবির আরও বলেন, ‘চামড়া ব্যবসায়ীরা কেন বলে ঈদের সময় লবণের দাম বেড়ে যায়, এটা আমি জানি না। আমার মনে হয় বাংলাদেশে এর চেয়ে সস্তা এবং কমদামে আর কোনো পণ্য নেই। বাজারে গেলে এক কেজি শাক কিনতেও ৫০ টাকা লাগে।
উল্লেখ্য, বিসিকের হিসেব অনুযায়ী এবছর ২৩ জুন পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন। আর চাহিদা ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টন। তবে চাহিদার এ হিসাবকে মানতে নারাজ বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতি। এ সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলছে, প্রকৃত পক্ষে লবণের চাহিদা ২২ লাখ ২৭ হাজার টন।
অন্যদিকে কক্সবাজারের ইসলামপুর লবণ মিল মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সামছুল আলম আজাদ বলেন, গত বছর লবণ আমদানির অনুমতি দেয়ার কারণে ৩ লাখ ২৭ হাজার টন লবণ উদ্বৃত্ব রয়ে গেছে। এবারও যে লবণ উৎপাদন হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় বেশি। কাজেই লবণ চাষিদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে লবণ আমদানির অনুমোদন দেয়া ঠিক হবে না। যারা চাহিদার তুলণায় লবণের ঘাটতি আছে বলে প্রচারণা চালাচ্ছে তারাই এ অবৈধ লবণ আমদানির সাথে জড়িত রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাই চাষিদের স্বার্থে এই অবৈধ লবণ আমদানিকারকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি।