সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ককে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করার লক্ষ্য হিসেবে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয় আজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সমন্বয়ক জনাব মোঃ আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরুয়াসু ইজুমি আজ সোনাদিয়ায় বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের ৬ষ্ঠ বৈঠকে পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেন। তিনি শিল্পাঞ্চলে জলাধারের পাশাপাশি বৃক্ষরোপন করার বিষয়ে জোর দেন। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার শিল্পাঞ্চলে ঝাউগাছ লাগানো এবং কৃত্তিম ম্যানগ্রোভ বন তৈরির প্রতি গুরূত্ব আরোপ করেন। তাঁরই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সকল অর্থনৈতিক অঞ্চল সমূহে ১৫ লাখ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ লাখ গাছ রোপনের পরিকল্পনা রয়েছে বেজার।
সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক মহেশখালি উপজেলার সোনাদিয়া, বিজয় একাত্তর ও সমুদ্র বিলাস মৌজায় অবস্থিত। এতে মোট জমির পরিমান ৯৪৬৭ একর । এ পার্কটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নয়নাভিরাম পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করার লক্ষ্যে বেজা কাজ করে চলেছে। সোনাদিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অক্ষুন্ন রেখে সংরক্ষিত বনকে আরও প্রসারিত করে শুধুমাত্র ৩০০ একর জায়গা জুড়ে ইকোট্যুরিজম পার্কটিকে গড়ে তোলা হবে।
এখানে অবস্থিত সুদৃশ্য ঝাউ বনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে বেজা সেখানে ব্যাপক বনায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও বেজার অন্যান্য পরিকল্পনায় রয়েছে -
সোনাদিয়ায় ইকো-ট্যুরিজম পার্ক প্রতিষ্ঠা করতে বেজা ইতোমধ্যে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভারতের মাহিন্দ্রা কনসালটেন্টকে নিয়োগ দিয়েছে।
পার্কটিকে পরিবেশ বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে বেজা প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র ৩০% স্থান ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও উন্নয়নে বেজা কাজ করছে এবং এ সকল পরিবেশের উপাদান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে পর্যটকদের নিকট তুলে ধরার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
এ দ্বীপে বসবাসরত ৩১৫টি পরিবারের পুনর্বাসনের একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে এবং পুনর্বাসনের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।
সোনাদিয়া দ্বীপে নতুন যাতে কোন মৎস্য ঘের ও অবৈধভাবে বসতি গড়ে না ওঠে সে বিষয়টি নিশ্চিতকল্পে জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার প্রয়োজনীয় কাজ করছে ।
দ্বীপ রক্ষাকল্পে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কাজ করছে।
দ্বীপের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং তাদের স্থাপনার জন্য জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।
সোনাদিয়া দ্বীপের জীব বৈচিত্র্য বজায় রেখে পরিবেশ-বান্ধব ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তুলতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করা হচ্ছে ।
দ্বীপের উপকূলীয় অংশে ঝাউবন সৃজনের কাজ চলমান।
সুপেয় পানি নিশ্চিতকল্পে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ ।
অবৈধ দখল বন্ধে পুলিশ ক্যাম্প ও সশস্ত্র আনসার নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব পবন চৌধুরী বলেন – সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক হবে প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ রাজ্য যেখানে থাকবে সবুজের সমারোহ। কাকড়া ও কচ্ছপের জন্য পৃথক জোন থাকবে যেখানে জনসাধারনের প্রবেশের কোন সুযোগ থাকবে না এবং জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ আরো সমৃদ্ধ করণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জনাব মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন টেকসই উন্নয়নের মূল শর্ত অনুযায়ী বৃক্ষরোপনের ফলে জীব বৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি ভূমি ক্ষয় রোধ পাবে এবং ভূমির স্থিতি রক্ষা হবে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া মোকাবিলায় বৃক্ষ রোপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, সরকার দ্বীপভিত্তিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ডেল্টা প্ল্যানের অধীনে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাই দ্বীপের জীব বৈচিত্র্য এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা অপরিবর্তিত রেখে দ্বীপবাসীদের জীবন ও জীবিকা সংস্থান করার জন্য ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক তারই প্রতিফলন।
বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার শুধুমাত্র শিল্পায়ন নয়, পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত সচেতনতার সাথে বিভিন্ন পরিকল্পনায় নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপে পরিবেশ বান্ধব ট্যুরিজম পার্কের প্রকল্পটি পৃথিবীর অন্যান্য দ্বীপ ভিত্তিক পর্যটন গন্তব্যের আদলে নির্মিত হবে, যাতে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি এ অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অঞ্চলটিকে নিয়ন্ত্রিতভাবে সবার সামনে প্রদর্শন করা যায়। তিনি দ্বীপটিকে নিয়ে বেজার পরিকল্পনার প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য যে, বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সিটি ব্যাংক লিমিটেড সোনাদিয়ায় কাজ করবে। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কক্সবাজার, বন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা ও প্রশাসনের প্রতিনিধিসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিগণসহ সিটি ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।