বঙ্গোপসাগরে টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সাগরে ইলিশ শিকারে গেছেন বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের দুই লক্ষাধিক জেলে।
বুধবার বরগুনার পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, তালতলী, কলাপাড়া, কুয়াকাটা, বরগুনা ও বরিশালের হাটবাজারে ইলিশ দেখা যাবে। আমদানিও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। এমনকি গত বছরের তুলনায় এবার আহরণকৃত ইলিশের পরিমাণ বেশি হবে বলে আশাবাদী তারা।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে জেলেরা বহর নিয়ে সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
বরিশাল মৎস্য ভবন সূত্রে জানা গেছে, গবেষণা অনুযায়ী মা ইলিশ ডিম দেয় নদীতে। তাই সমুদ্রের ইলিশ তার প্রজনন মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে চলে আসে ডিম ছাড়তে। তাই প্রতি বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে সব ধরনের ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে। এর পর ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকে।
তবে এবার প্রথমবারের মতো সাগরে মাছের প্রজনন, প্রজননের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি, প্রজননের পরে ডিম, রেণু, ছোট মাছের নিরাপত্তা, বেড়ে ওঠার সুযোগ ও সাগরে মৎস্য সম্পদের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সাগরে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ ছিল।
যার শেষ হয়েছে ২৩ জুলাই দিবাগত রাত ১২টায়। তাই ২২ জুলাই বিকাল থেকেই ইলিশের সন্ধানে গভীর সাগরে যাত্রা শুরু করেন বরিশালসহ দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা।
মৎস্য ভবন সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২৪ জেলে রয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় দুই লাখ জেলে সাগরে ইলিশ ধরেন। যার মধ্যে ভোলা জেলায় সর্বোচ্চ এক লাখ ৩২ হাজার ২১৯ জেলে রয়েছেন।
আর সব থেকে কম ৫ হাজার ২২৮ জেলে রয়েছেন ঝালকাঠি জেলায়।
এ ছাড়া বরিশাল জেলায় ৭ হাজার ৬৪০, পটুয়াখালী জেলায় ৬৯ হাজার ৬৬০, বরগুনা জেলায় ৪৪ হাজার ৮৫৫ জন ও পিরোজপুর জেলায় ২৪ হাজার ২২২ জন।
এদের মধ্যে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ভোলার এক লাখ ৭৭ হাজার, পটুয়াখালীর ৬৪ হাজার ৭৭৭, বরগুনার ৩৯ হাজার ৮০০ ও পিরোজপুরের ৮ হাজার ২৩০ জেলেকে সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে প্রতি জনকে ৪০ কেজি করে মোট ৮৬ হাজার টন চাল দেয়া হয়েছে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, মূলত মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির জন্যই সাগর এবং নদীতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তার অংশ হিসেবে সাগরে ৬৫ দিন ইলিশ শিকার নিষেধ ছিল। ফলে সাগরে ইলিশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আমরা আশাবাদী। তা ছাড়া পূর্বের থেকে জেলেরা অনেক সচেতন। তাদের সচেতনতার কারণেই সাগরে মৎস্যসম্পদ ইলিশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজাহারুল ইসলাম বলেন, বিভাগের সব থেকে বেশি জেলে রয়েছে ভোলায়। যার মধ্যে সিংহভাগ জেলে সাগরে ইলিশ শিকারে যায়। এরা রাত ১২টার পর পরই ইলিশ শিকারের জন্য বঙ্গোপসাগরে দলবদ্ধভাবে যাত্রা শুরু করে।
তবে কিছু জেলে রয়েছেন, যারা গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকার করেন। তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই বিকালের দিকে তারা ফিশিং ট্রলার নিয়ে সাগরে যাত্রা শুরু করেন।
মৎস্য অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় সিনিয়র মহাপরিচালক আজিজুল হক বলেন, দেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ (৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫ মেট্রিক টন) ইলিশ আসছে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার অধীনস্ত নদী ও সাগর থেকে।
তিনি বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞার ফলে এ বছর বরিশালের সাগর ও নদীতে ইলিশের প্রবৃদ্ধি পূর্বের তুলনায় অনেক হবে।
এরই মধ্যে নদী এবং সাগরে রাজা ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এর কারণ সচেতনতা এবং সরকারের যুযোপযোগী উদ্যোগ। নদী ও সাগরে মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিতে শুধু সরকার লাভবান হচ্ছে না।
মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির কারণে জেলেদেরও এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না। তাই আইন মেনে মাছ ধরলে দেশের মৎস্যসম্পদ বিশেষ করে ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।