৩২% দাম কমেছে দার্জিলিং চা এর দাম

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৭-২৫ ১৩:৫০:৪৫


ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পাহাড়ি জেলা দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত চায়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। অনন্য স্বাদ ও সুঘ্রাণের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে এখানকার চা অনেক দামে বিক্রি হয়। বিশ্বের সবচেয়ে দামি চায়ের মধ্যে অন্যতম এখানকার চা। কয়েক বছর ধরে একের পর এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম দামি এ চা খাত। রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে শ্রমিক সংকট, এর পর প্রতিকূল আবহাওয়া, এমন নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উৎপাদন বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত পানীয় পণ্যটির চাহিদা কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে পণ্যটির দামে। গত বছরের তুলনায় দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত চায়ের দাম ৩২ শতাংশ কমেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিম্নমানের চায়ের উৎপাদনের ফলে দামের এ পতন। খবর বিজনেস লাইন।

সর্বশেষ সপ্তাহে মৌসুমের ২৯তম নিলামে দার্জিলিংয়ের উৎপাদিত চায়ের দাম ৩২ শতাংশ কমে প্রতি পকজি ৪০২ দশমিক ৭৫ রুপিতে বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই নিলামে প্রতি কেজি চা বিক্রি হয়েছিল ৫৯৩ দশমিক ৮৪ রুপিতে।

কলকাতা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিটিএ) সেক্রেটারি জে কল্যাণসুন্দরম জানান, চলতি সপ্তাহে বিক্রি ৫৮ শতাংশ বেড়ে ৫৬ হাজার ৮৮ কেজি হয়েছে। গত বছরের একই সময় বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ৪৪৬ কেজি।

দার্জিলিংয়ের ৮৭টি চা বাগানে প্রতি বছর ৮০-৮৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। যার ৫০ শতাংশ জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) ট্যাগ ব্যবহার করে বিদেশে রফতানি করা হয়। আর ২৫ শতাংশ বিক্রি হয় নিলামে। অন্যদিকে উৎপাদিত চায়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যায় বেসরকারি খাতে।

তিন-চার সপ্তাহ ধরে দার্জিলিংয়ে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বছরের প্রথম পর্যায়ে (ফার্স্ট ফ্ল্যাশ) উৎপাদিত চায়ের মান গেছে পড়ে। ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে তুলনামূলক নিম্নমানের চা কিনতে চাইছেন না। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।

এছাড়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এক দশক পর দার্জিলিংয়ে তুষারপাত হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর এক দফা তুষারপাত হওয়ার পর ফের চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি দার্জিলিংবাসী বরফের দেখা পায়। প্রথম পর্যায় শুরুর সময় এ তুষারপাতে চা পাতার কুঁড়ি বের হতে পারেনি। ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন। তুষারপাতের পাশাপাশি এবার দার্জিলিংয়ে শীত বেশি পড়েছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা থাকছে ১৬-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে তা কমে দাঁড়াচ্ছে ৮-৯ ডিগ্রিতে। মাত্রাতিরিক্ত শীত দার্জিলিংয়ে চা উৎপাদন ব্যাহত করছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দার্জিলিংয়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে চা পাতা পুষ্ট হতে পারেনি। মান পড়ে গেছে। চলতি মাসেও বৃষ্টির কারণে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন ১০-১৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। তবে উৎপাদন কমলেও দার্জিলিং চায়ের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ক্রেতারা বেশি দামে তুলনামূলক নিম্নমানের চা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এটা দার্জিলিংয়ের চা শিল্পের জন্য নতুন একটি সংকট।

দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের (ডিটিএ) তথ্যমতে, পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ২০১৭ সালে দার্জিলিংয়ে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে সেখানকার গোর্খা সম্প্রদায়ের মানুষ। চলে টানা বন্ধ। রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা যায় বেশ কয়েকজন। দার্জিলিংয়ের চা বাগানগুলোয় কর্মরত সিংহভাগ শ্রমিক গোর্খা সম্প্রদায়ের। এ কারণে আন্দোলন চলার সময় শ্রমিক সংকটে সেখানকার বাগানগুলোর চা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কলকাতাকেন্দ্রিক চায়ের নিলামে ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবার দার্জিলিং চা সরবরাহ বন্ধ থাকে। বিশ্বব্যাপী বাজার হারায় এখানকার চা শিল্প।

জাপানের টি ব্যাগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দার্জিলিং থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ কেজি চা আমদানি করে। কিন্তু ২০১৭ সালের মতো আবার দার্জিলিংয়ে সংকট অবস্থা তৈরির আশঙ্কায় ভারত থেকে চা আমদানি প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে দেশটি। বর্তমানে দেশটি দার্জিলিংয়ের বিকল্প বাজারের দিকে ঝুঁকছে।

ডিটিএর চেয়ারম্যান বিনোদ মোহন বলেন, রফতানি কমে আসায় চায়ের দাম নিম্নমুখী। মানের দিক থেকে দার্জিলিংয়ের চায়ের মতো না হলেও এর সঙ্গে এখন প্রতিযোগিতা করছে নেপাল।

স্থানীয় চা উৎপাদনকারীরা বলছে, নেপালি চায়ের সঙ্গে বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং চা-কে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। ভৌগোলিক নৈকট্য ও জলবায়ুগত কারণে নেপালে উৎপাদিত চায়ের মান দার্জিলিং চায়ের কাছাকাছি এবং দামও বেশ কম। যখন রাজনৈতিক সংকটে দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ ছিল, তখন দেশী-বিদেশী ক্রেতারা তুলনামূলক সস্তা নেপালি চায়ের প্রতি ঝুঁকেছিলেন। এখন বৈরী আবহাওয়ায় দার্জিলিং চায়ের বাজারে নতুন সংকটে নেপালি চায়ের বেচাকেনা জমে উঠেছে। দামে সস্তা হওয়ায় ক্রেতারাও এ চা বেশি কিনছেন। আগামী দিনগুলোয় বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং চা-কে বিদ্যমান এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাজারে টিকে থাকতে হবে।