মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের তাদের নিজ দেশে ফেরানোর জন্য যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্যাক ফর গুড’ (চিরতরে ফেরা)। এর আওতায় অবৈধ শ্রমিকরা ফিরে আসার পর তাদের ওপর অনির্দিষ্টকাল ধরে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। আগামী মাস থেকে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত ওই কর্মসূচি চলবে।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ গতকাল বুধবার এ কর্মসূচি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিরা ন্যূনতম জরিমানা দিয়ে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচির আওতায় আত্মসমর্পণের জন্য অভিবাসন বিভাগের অফিসগুলোতে যাওয়ার পর এরই মধ্যে অবৈধ হয়ে পড়া কোনো বিদেশিকে গ্রেপ্তার করা হবে না। তবে অভিবাসন বিভাগের বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে আটক হওয়া বিদেশিরা এই কর্মসূচির আওতায় আসবে না।
বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে যারা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে দেশে ফিরবে না তাদের গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি কারাদণ্ড, বেত্রাঘাত, জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ বলেছে, বৈধ পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট আছে এমন ব্যক্তিরা, ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও অবস্থান করছে, বৈধ ভিসা বা পারমিট নেই এমন ব্যক্তিরা দেশে ফেরার সুযোগ নিতে পারবে। যাদের বৈধ পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই তারাও মালয়েশিয়ায় নিজ নিজ দূতাবাস/হাইকমিশন থেকে বৈধ পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্টের জন্য আবেদন করে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে পারবে।
এই কর্মসূচির আওতায় সাধারণ ক্ষমা গ্রহণে আগ্রহীদের প্রত্যেককে ৭০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (প্রায় ১৪ হাজার টাকা) জরিমানা দিতে হবে। তাদের ফেরার জন্য বৈধ পাসপোর্ট বা জরুরি ট্রাভেল ডকুমেন্ট এবং দেশে ফেরার জন্য সরাসরি ফ্লাইটের টিকিট থাকতে হবে। আর আবেদনের সাত দিনের মধ্যে তাদের মালয়েশিয়া ছাড়তে হবে।
মালয়েশিয়ায় তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী অবৈধভাবে অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হয়। জানা গেছে, গত ১৮ জুন মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ বিদেশিদের দেশে ফেরার জন্য কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবৈধ বাংলাদেশিদের উৎসাহিত করছে। সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরার প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক সহজ এবং জরিমানাও বেশ কম। সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির বাইরে যে পদ্ধতি মালয়েশিয়ায় চালু আছে তাতে একজন বিদেশিকে গ্রেপ্তার, জরিমানা ও কারাবরণ শেষে ‘ডিপোর্টেশন সেন্টারে’ অবস্থান করে দেশে ফিরতে হয়। আর আত্মসমর্পণকারীদের ‘স্পেশাল পাস’ পেতে ১৪ দিন অপেক্ষা এবং তিন হাজার ১০০ রিঙ্গিত (প্রায় ৬৩ হাজার টাকা) বা এরও বেশি জরিমানা দিতে হয়।
ফ্লাইটের টিকিট কাটার পরই দেশে ফেরার জন্য মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগে আবেদন করতে হবে। টিকিট কাটার আগে আবেদন করা যাবে না। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ শুধু সরাসরি ফ্লাইট যেমন কুয়ালালামপুর-ঢাকা বা জহুরবারু-কুয়ালালামপুর-ঢাকা বা পেনাং-কুয়ালালামপুর-ঢাকা ফ্লাইটের টিকিট গ্রহণ করবে। ট্রানজিট যেমন কুয়ালালামপুর-সিঙ্গাপুর-ঢাকা বা কুয়ালালামপুর-থাইল্যান্ড-ঢাকা কিংবা কুয়ালালামপুর-ভারত-ঢাকা ফ্লাইটের টিকিট গ্রহণ করা হবে না।
সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফিরতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিকরা যাতে সহজে টিকিট পায় সে জন্য গতকাল বুধবার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম শহীদুল ইসলাম কুয়ালালামপুর-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইনসগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি স্বল্প মূল্যে ও হয়রানিমুক্তভাবে টিকিট বিক্রি নিশ্চিত করতে এয়ারলাইনসগুলোর প্রতিনিধিদের প্রতি অনুরোধ জানান।