জনতা ব্যাংকের বড় কয়েকটি গ্রুপ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় সংকটের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকটি । তবে এর মধ্যেও ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে সফলতা দেখিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ থেকে জনতা ব্যাংক আদায় করেছে ৪০৯ কোটি টাকা, যা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও আদায় পরিস্থিতিসংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জনতা ব্যাংক বলছে, এনোনটেক্স, ক্রিসেন্ট, রানকাসহ কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি দেখাচ্ছে। এগুলো ছাড়া সামগ্রিক বিচারে ব্যাংকের পরিস্থিতি ভালো। অনেক খেলাপি গ্রাহকের কাছ থেকে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক খেলাপিদের কাছ থেকে আদায় করেছে ৪০৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। একই সময়ে সোনালী ব্যাংক মাত্র ১৭১ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের অবস্থান আরো খারাপ। এ দুটি ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আদায় করেছে যথাক্রমে ৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ও ২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বিপর্যস্ত বেসিক ব্যাংক এ তিন মাসে ৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা আদায় করতে পেরেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) আদায় করেছে ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানান জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। তিনি বলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা। এজন্য ব্যাংকের কর্মীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে। সব খেলাপি গ্রাহককে নিবিড় তত্ত্বাবধানের আওতায় আনা হয়েছে। মাঝারি ও ছোট গ্রাহকদের কাছ থেকে জনতা ব্যাংকের আদায় পরিস্থিতি ভালো। তবে কয়েকটি বড় গ্রাহক ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ায় জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
পুনঃতফসিলের নতুন নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে অচিরেই জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদী আব্দুছ ছালাম আজাদ। তিনি বলেন, এনোনটেক্স, রানকাসহ কয়েকটি গ্রুপের ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়ে আলোচনা এগিয়েছে। আশা করছি, এ বছরের মধ্যেই জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এর অর্ধেকের বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের। এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৮ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংকিং খাতের বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ বর্তমানে খেলাপি। এর বাইরে অবলোপনকৃত ঋণ রয়েছে ৪০ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা।