আগামী বছর থেকে দিতে হবে বোনাস ও লভ্যাংশের উপর কর। এ বছর থেকে এই আইন কার্যকর হচ্ছে না। সম্প্রতি জারী করা জাতীয় রাজস্ব বোড (এনবিআর) এর পরিপত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। একই সাথে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সান বিডির এই প্রতিবেদক।
অর্থ আইন,২০১৯ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্টক ডিভিডেন্ড ও রিটেইনড আর্নিংসের ওপর যে কর আরোপ করা হয়েছে তা নিয়ে কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। অনেকেই ৩০ জুন,২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরে যেসব কোম্পানি ডিভিডেন্ড প্রদান করবে তাদের ওপর এই ট্যাক্স আরোপ কার্যকর হবে বলে মনে করেছে। কিন্তু আয়কর পরিপত্র-১ ২০১৯-২০ অনুযায়ী, স্টক ডিভিডেন্ড ও রিটেইন আর্নিংসের ওপর ট্যাক্স আরোপের বিধান ২০২০-২১ কর বছর সংশ্লিষ্ট আয় বছর থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ ৩০ জুন,২০২০ অর্থবছর থেকে বিধানটি কার্যকর হবে। তাই সদ্য সমাপ্ত ৩০ জুন,২০১৯ অর্থবছরের কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড প্রদানের ক্ষেত্রে এই বিধানটি কার্যকর হবে না।
জানা যায়, অর্থ আইন, ২০১৯ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশের নতুন ধারা ১৬এফ সংযোজন করা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিকে স্টক ডিভিডেন্ডের কমপক্ষে সম পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করতে হবে। যদি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদানের পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের চেয়ে বেশি হয় তাহলে যে পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে বা হয়েছে তার পুরোটার ওপর ১০% হারে কর আরোপ করা হবে। কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্বে এ কর পরিশোধ করতে হবে এবং এ কর কোম্পানির অন্য কোন কর দায়িতা (tax liability) এর সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না। এ বিধান ২০২০-২১ কর বছর সংশ্লিষ্ট আয় বছর থেকে কার্যকর হবে।
উদাহরণ:
০১. যদি কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৫ লাখ টাকা অভিহিত মূল্যের স্টক ডিভিডেন্ড এবং ৫ লাখ টাকা ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে থাকে তাহলে ৫ লাখ টাকা স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর কোনো কর আরোপ হবে না।
০২. যদি কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৪ লাখ টাকা অভিহিত মূল্যের স্টক ডিভিডেন্ড এবং ৬ লাখ টাকা ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে থাকে তাহলে ৪ লাখ টাকা স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর কোনো কর আরোপ হবে না।
০৩. যদি কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৬ লাখ টাকা অভিহিত মূল্যের স্টক ডিভিডেন্ড এবং ৪ লাখ টাকা ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে থাকে তাহলে ৬ লাখ টাকা স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১০% কর অর্থাৎ ৬০ হাজার টাকা কর আরোপ হবে।
০৪. যদি কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি ১০ লাখ টাকা অভিহিত মূল্যের স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে এবং কোনো ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান না করে সেক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১০% কর অর্থাৎ ১ লাখ টাকা কর আরোপ হবে।
এদিকে অর্থ আইন,২০১৯ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশের নতুন ধারা ১৬জি সংযোজন করা হয়েছে। সংশোধিত এ ধারা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি কোনো অর্থবছরে কর পরবর্তী নীট মুনাফা (net profit after tax) এর সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইনড আর্নিংস, ফান্ড, রিজার্ভ অথবা সারপ্লাস হিসাবে রাখতে পারবে। অর্থাৎ কোম্পানিকে কোনো অর্থবছরে কর পরবর্তী নীট মুনাফা (net profit after tax) এর কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড (ধারা ১৬এফ অনুযায়ী স্টক ও ক্যাশ) হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের প্রদান করতে হবে এবং কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্বে শেয়ারহোল্ডারদের এই ডিভিডেন্ড প্রদান সম্পন্ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আয় বছর সমাপ্তির তারিখে কোম্পানির ব্যালেন্স শিটে উক্ত ৩০ শতাংশ amount to be distributed as dividend হিসেবে প্রদর্শন করতে হবে। যদি ৩০ শতাংশের কম ডিভিডেন্ড (ধারা ১৬এফ অনুযায়ী স্টক ও ক্যাশ) প্রদান করা হয় তাহলে রিটেইনড আর্নিংস, ফান্ড, রিজার্ভ অথবা সারপ্লাস খাতে স্থানান্তরিত সম্পূর্ণ অংকের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্বে এ কর পরিশোধ করতে হবে এবং এ কর কোম্পানির অন্য কোন কর দায়িতা (tax liability) এর সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না। এ বিধান ২০২০-২১ কর বছর সংশ্লিষ্ট আয় বছর থেকে কার্যকর হবে।
উদাহরণ: কোনো কোম্পানির কর পরিশোধের পর মুনাফা ১০ লাখ টাকা। কোম্পানিটি ২০ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ টাকার ক্যাশ অথবা স্টক অথবা উভয় আকারেই ডিভিডেন্ড প্রদান করলো এবং বাকি ৮০ শতাংশ বা ৮ লাখ টাকা রিটেইনড আর্নিংস হিসেবে রেখে দিলো। সেক্ষেত্রে কোম্পানিকে পুরো ৮ লাখ টাকার ওপর ১০ শতাংশ ট্যাক্স অর্থাৎ ৮০ হাজার টাকা কর প্রদান করতে হবে।