‘ভিআইপি সুবিধা’ আদায়ের নামে ফেরি আটকে রাখায় তরুণ শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে টিআইবি’র তীব্র নিন্দা: ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও ভিআইপি সংস্কৃতির লাগামহীন অপব্যবহার বন্ধে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের জোর দাবি।
উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে ‘ভিআইপি সুবিধা’ দেয়ার নামে ফেরিযাত্রা প্রায় তিন ঘন্টা আটকে রাখায় গত ২৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে চিকিৎসার জন্য খুলনা থেকে ঢাকাগামী গুরুতর আহত এক স্কুল শিক্ষার্থীর মাঝ নদীতে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক, হতাশা ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গণমাধ্যম সূত্রে দুঃখজনক এ ঘটনা সম্পর্কে জেনে, অবিলম্বে নিহত তিতাস দাস এর পরিবারকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও সংশ্লিষ্ট দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি, ভিআইপি সুবিধার নামে জনগণের নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ বহুবিধ হয়রানি বন্ধে এ ধরণের সুযোগ-সুবিধার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
আজ এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। অথচ এই দায়িত্বের সম্পূর্ণ অবহেলা করে ভিআইপি সুবিধার নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে যেভাবে তিতাস-এর অকাল মৃত্যু হল তা কোনভাবেই কাম্য নয়। টিআইবি’র পক্ষ থেকে তিতাসের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি, এবং তিতাসের পরিবারকে অনতিবিলম্বে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে তথাকথিত ভিআইপি সংস্কৃতির এরূপ ব্যাপক অপব্যবহার রোধে সুনির্দষ্ট সরকারি আদেশের মাধ্যমে ভিআইপি সুবিধা আদায়ের নামে জনগণের সকল প্রকার হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতা বন্ধ করার উপায় নিশ্চিতের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসনের নিকট বিশেষ আবেদন জানাচ্ছি। ভিআইপি’দের অযাচিত সুবিধা দিতে গিয়ে সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুবরণ করতে হবে এ ধরণের ঘটনা কোন গণতান্ত্রিক দেশের চর্চা হতে পারেনা। সংবিধান যেখানে সকল নাগরিকের নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছে, সেখানে কোন বিশেষ শ্রেণীর নাগরিকের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের এই বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক আচরণ প্রতিহত করতে এরূপ ব্যর্থতা কলঙ্কজনক। এর প্রতিকারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, যারা জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্রত, তাদের নিন্দনীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ও গাফিলতির কারণেই এ ঘটনা সংঘঠিত হতে পেরেছে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, প্রচলিত চর্চার দোহাই দিয়ে জ্যেষ্ট কর্মকর্তার জন্য ‘ভিআইপি’ প্রটোকলের ব্যবস্থা করতে হবে- এ যেন এখন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে, তাতে সৃষ্ট জনদূর্ভোগের বিষয়ে যেন কারও কোন দায় নেই। ঘটনা সংঘটনের পর প্রচলিত চর্চার দোহাই দিয়ে এ অনাচার এর দায় এড়ানোর প্রবণতাকে একইসাথে দুঃখজনক বলে অভিহিত করে ড. জামান বলেন, ‘‘সরকারের জন্য এ ধরণের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত ও বিব্রতকর। আমরা আশা করি, এ দুঃখজনক ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে জবাবদিহির আওতায় এনে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করে সরকার তা জনসাধারণকে অবহিত করবে।”