পরিবর্তন হতে যাচ্ছে নতুন কোম্পানি গঠনে। আসছে নতুন আইন। এই আইনে একজন অংশীদার দিয়েই গঠন করা যাবে কোম্পানি। যদিও চলমান কোম্পানি আইনে এই সুযোগ নেই। নতুন আইনে একটি কোম্পানির পুরো অংশীদারিত্ব এক ব্যক্তির হাতে রাখার সুযোগ থাকছে।
বর্তমান কোম্পানি আইন ১৯৯৪ সংশোধনের খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশোধিত খসড়ায় বিদ্যমান আইনের এ পরিবর্তনের পাশাপাশি যৌথ মালিকানার কোম্পানির পরিচালকের সংখ্যা ১৪ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২১ জন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়াও আগের তুলনায় সহজ করা হচ্ছে। সহজে ব্যবসা করার সূচকে উন্নতির লক্ষ্যে সরকার এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্নিষ্টরা জানান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি সংশোধিত কোম্পানি আইন ২০১৮-এর খসড়ার ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত (ভেটিং) নিয়েছে। এখন খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলে আইনটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করা হবে। এর আগে গত বছর নভেম্বরে এ আইনের খসড়ার প্রাথমিক অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, ভেটিং শেষ হয়ে থাকলে পরবর্তী যে কোনো মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য এটি উপস্থাপন করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আগের আইনে দেশে এক ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানি গঠনের সুযোগ না থাকলেও একক পরিবারের মালিকানাধীন অনেক কোম্পানি রয়েছে। আইন পরিপালনের জন্য স্ত্রী, সন্তানদের নামে শেয়ার দিয়ে সাধারণত এমন কোম্পানি গঠন করা হয়। তাদের নিয়েই গঠন করা হয় পরিচালনা পর্ষদ। এসব কোম্পানি পরিবারের প্রধান বা ওই উদ্যোক্তার সিদ্ধান্তেই পরিচালিত হয়। পরিচিতিও পায় ওই ব্যক্তির নামে। এমনকি মালিকানার নিয়ম মানতে গিয়ে অনেক বেনামি শেয়ার রাখার ঘটনাও আছে। যে কারণে এক ব্যক্তির মালিকানার কোম্পানি গঠনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, একজনের মালিকানায় কোম্পানি গঠনের সুযোগ দেওয়ার পদক্ষেপ ভালো উদ্যোগ। এতে শুধু আইন পরিপালনের জন্য কোম্পানির নামমাত্র অংশীদার বা পরিচালক তৈরির দরকার হবে না।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খানও এটিকে ভালো উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি জানান, দেশের উদ্যোক্তারা অনেকদিন ধরেই এক ব্যক্তির কোম্পানি খোলার সুযোগ চেয়ে আসছেন।
আইন সংশোধনের খসড়ায় বলা হয়েছে, এক ব্যক্তির কোম্পানি বলতে এমন কোম্পানি বোঝাবে যেখানে একজন মাত্র ব্যক্তি ওই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হবেন। এ ধরনের কোম্পানির নামের শেষে 'ওয়ান পারসন কোম্পানি' বা ওপিসি লেখা থাকবে। এগুলোর কোনোটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে সেটির নামের শেষে 'পাবলিক সীমিতদায় কোম্পানি' বা পিএলসি এবং কোনো কোম্পানি প্রাইভেট কোম্পানি হলে সেটির শেষে 'সীমিতদায়' বা এলটিডি লেখা থাকতে হবে।
অন্যান্য কোম্পানির মতো এক ব্যক্তির কোম্পানিরও বার্ষিক সাধারণ সভা করতে হবে। সভা অনুষ্ঠানের ২১ দিনের মধ্যে কোম্পানির সচিব বা ম্যানেজার বা এ ধরনের কেউ না থাকলে কোম্পানির পরিচালক সারসংক্ষেপ সই করে নিবন্ধকের কার্যালয়ে পাঠাবেন। মালিকই ওই কোম্পানির পরিচালক হবেন এবং তিনি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে ব্যবস্থাপক, ম্যানেজার, কোম্পানি সচিব নিয়োগ করতে পারবেন।
এ ধরনের কোম্পানিকে ছয় মাসে কমপক্ষে একটি পরিচালক সভা করতে হবে। তবে একটি সভার ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সভা করার দরকার হবে না। এ ধরনের কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন হিসাব বছর সমাপ্তির দিন থেকে পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে সাধারণ সভায় অনুমোদন করে নিবন্ধকের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। প্রতিটি ব্যালান্স শিট, লাভ-ক্ষতির হিসাব বা আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদনে মালিক নিজেই সই করবেন। এ ধরনের কোম্পানি অন্যগুলোর মতো স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যাংক ঋণ নিতে পারবে।
অন্য কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যবসাও করতে পারবে। চাইলে স্বেচ্ছা অবলুপ্তির উদ্যোগও নিতে পারবেন মালিক। এ ধরনের কোম্পানির মালিকের মৃত্যুর পর কে মালিক হবেন তা উদ্যোক্তাকে আগে থেকেই অর্থাৎ নিবন্ধনের সময়ই নির্ধারণ করে রাখতে হবে।