বোনদের কখনও ভোলে না এই ভাইরা৷ তা হলে, ওই ভাইদের কীভাবে ভুলে থাকা যায় উৎসবের দিনে! কীভাবেই-বা এড়িয়ে যাওয়া যায় ভাইফোঁটা-র দিনেও!
আর তাই, ভুলে থাকা তো নয়-ই৷ এড়িয়ে যাওয়া-ও নয়৷ যে কারণে, ওই ভাইরাও নিল ভাইফোঁটা৷ তবে, ওই ভাইদের সকলের-ই যে শুক্রবার এমন সৌভাগ্য হল, তাও আবার নয়৷ কেননা, ওই ভাইরাও পরিবারের সদস্য৷ কিন্তু, কোনও পরিবারে যেমন নেই কোনও বোন৷ তেমনই, কোনও পরিবারে আবার ওই ভাইদের জন্মদিন পালিত হলেও, মেলেনি ভাইফোঁটা!
ওই ভাইরা আসলে সারমেয়৷ আর, এমনই এক ভাইকে ফোঁটা দিয়ে, কার্যত তাক লাগিয়ে দিয়েছে কলকাতার দুই বোন৷ এবং, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকেও জারি রয়েছে আলোড়ন৷ ওই সারমেয়র কাছে এ ভাবে ভাইফোঁটা প্রাপ্তি অবশ্য এই প্রথম নয়৷ আগেও কলকাতার ওই দুই বোনের কাছে দু’বার ভাইফোঁটা পেয়েছে ওই সারমেয়-ভাই৷ তবে, ভাইফোঁটা, আর, শুকনো মুখ, তা কি হয়? কাজেই, বোনদের কাছে ভাইফোঁটা মেলার পর দিব্যি হল পেটপুজোও!
এ ভাবে ভাইফোঁটা পাওয়ার বিষয়টি জানার পরে, এই রকম ভাই যেন সকলের হয়, তেমন প্রত্যাশাও রেখেছেন কেউ কেউ৷ এ দিকে, বাঘ বাঁচানোর বার্তা পৌঁছে দিতে, শুক্রবার সকালে শোভাবাজার মেট্রো রেলওয়ে স্টেশনের এক নম্বর গেটের কাছে ভাইফোঁটা নিয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার! শুধুমাত্র বোনদের কাছে নয়৷ ভাইদের কাছেও এ দিন সেখানে ফোঁটা নিয়েছে বাঘমামা! তবে, সারমেয়-ভাই আসল হলেও, এ দিন অবশ্য প্রতীকী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হিসেবে বাঘমামার ছবিতে দেওয়া হয়েছে ভাইফোঁটা৷ তেমনই, প্রান্তিক শিশুদের জন্য আয়োজিত ওই ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে হাজির দু’শোরও বেশি ভাই এ দিন বাঘমামার মুখোশও পরেছিল৷
শোভাবাজারে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল উত্তর কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেডিক্যাল ব্যাংক৷ ওই সংগঠনের কর্ণধার ডি আশিসের কথায়, ‘‘বাঘ বাঁচানোর জন্য আরও সচেতনতা বৃদ্ধিতে যেভাবে ভাইফোঁটায় সাধারণ মানুষের সাড়া পেলাম, তা অবিশ্বাস্য৷’’ বাঘমামাকে ভাইফোঁটা দেওয়ার ওই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেও এ দিন যেমন আপ্লুত হয়েছে ফেসবুকের বিভিন্ন অংশ৷ তেমনই, ওই সারমেয়কে ভাইফোঁটা দেওয়ার জেরেও ফেসবুকের বিভিন্ন অংশ যারপরনায় আপ্লুত৷ এবং, এ ভাবেও আবার অন্য এক শোভা ছড়িয়ে পড়ল খোদ ভাইফোঁটার মাহাত্ম্যেও!
ওই সারমেয়-ভাইয়ের মায়ের নাম পিয়ালী ভট্টাচার্য৷ তাঁর দুই মেয়ে ঐশী আর ঋদ্ধি৷ তবে, তাঁর এক ছেলেও রয়েছে৷ ওর নাম শ্যাম্পেন৷আদর করে ডাকা হয় শ্যাম্পু নামে৷ ওই শ্যাম্পু-ই এ দিন ঐশী আর ঋদ্ধির কাছে ভাইফোঁটা নিয়েছে৷ পিয়ালী ভট্টাচার্যর কথায়, ‘‘আমার দুই মেয়ের থেকে শ্যাম্পু বেশি আদরের৷ গত দু’ বছরের মতো এ বারও ওকে ভাইফোঁটা দিয়েছে আমার দুই মেয়ে৷’’ ঐশি আর ঋদ্ধি অবশ্য শ্যাম্পুর থেকে বয়সে বড়৷ কাজেই, পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে মোটেও কম নয় শ্যাম্পুর কদর৷
যে কারণে, শুধুমাত্র ভাইফোঁটাও নয়৷ শ্যাম্পুর জন্মদিন পালনের পাশাপাশি, গত তিন বছর ধরে ওকে রাখিও পরিয়ে দিয়েছে ঐশী আর ঋদ্ধি৷ পিয়ালী ভট্টাচার্যর কথায়, ‘‘রাখি পরে শান্ত হয়ে থাকে শ্যাম্পু৷ এমন কিছু করে না, যাতে রাখি নষ্ট হয়ে যায়৷’’ শ্যাম্পু ভাবে ভাইফোঁটা পাওয়ায় আপ্লুত সারমেয় তথা পশুপ্রেমী, অধ্যাপিকা দেবযানী চট্টোপাধ্যায়ও৷ তাঁরও এক ছেলে আর মেয়ে রয়েছে৷ ওই সারমেয়-ছেলে আর মেয়ের জন্মদিন বেশ জমিয়ে পালন করেন তিনি৷ দেবযানী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমার মেয়ে জুবি আর ছেলে ফুচকার জন্মদিনে কেক তো কাটা হয়-ই৷ ওদের জন্মদিনে রাস্তার সারমেয়দের জন্য মাংস আর ভাতের ব্যবস্থাও করা হয়৷’’
সানবিডি/ঢাকা/এসএস