চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। এটি বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। আর পরের তিন মাসে অর্থাৎ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বেড়েছে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এটি গত মার্চে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। এ সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। এটি হতাশার কথা।’
মিজ্জা আজিজুল আরও বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে পরের তিন মাসে অর্থ্যাৎ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে খেলাপি ঋণ বাড়লেও বৃদ্ধির হার কম।’
তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমার পরিবর্তে এভাবে বাড়তে থাকলে ব্যাংকিংখাত আরও চাপে পড়বে। যে কোনো মূল্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে। তা করা না গেলে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।’
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা এখন খেলাপি ঋণ। এটি কমিয়ে আনার জন্য সরকারসহ ব্যাংকগুলো চেষ্টা করছে। তবে আশার কথা হলো, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যেভাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল, পরের তিন মাসে বৃদ্ধির হারটা অনেক কম হয়েছে। আশা করছি, আগামীতে আরও কমে আসবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের তিন মাসে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। তবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বাড়লেও তা প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় অনেক কম। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিতরণকৃত ঋণের খেলাপির পরিমাণ ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। গত মার্চে এর পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এটি মোট বিতরণ করা ঋণের ৩২ দশমিক ১৮ শতাংশ।
অন্যদিকে বিশেষায়িত খাতের দুই ব্যাংকের জুন পযন্ত খেলাপি হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ছিল ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এছাড়াও বেসরকারি খাতের ৪২টি ব্যাংকের জুন পর্যন্ত খেলাপি হয়েছে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। গত মার্চে এর পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৭ দশমিক শতাংশ। এছাড়াও বিদেশি খাতের ৯টি ব্যাংকের জুন-১৯ পর্যন্ত খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৫৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক শতাংশ।