দোষ কি খাস কামরার?
:: প্রকাশ: ২০১৯-০৯-০২ ১৬:৩৪:২৮
অযোগ্যতা কোন ব্যাপার না, কারণ যে কেউ চাইলেই তার চেষ্টা, মেধা, মনন দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। কিন্তু অখাদ্য হলে তা আর খাদ্য উপযোগিতা পায় না। তার ঠিকানা হয় ভাগাড়েই। অন্যথায়, ঘরময় দুর্গন্ধ ছড়ায়।
ঠিক এমনই কিছু দুর্গন্ধময় অখাদ্য আমাদের চারপাশের সমাজ ব্যবস্থায় বিরাজমান। আর তাদের শিকড়-বাকড়ও ছড়াচ্ছে এমন হারে, দিনকে দিন তাদের গোড়া শক্ত হচ্ছে। তাদের চাপে বা বিস্বাদে, ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হচ্ছে সুস্বাদের সমাজ, রাষ্ট্র। যোগ্যতার মাপকাঠিতে সেই পুঁতিগন্ধময় অখাদ্যদের করাল থাবায় লড়তে লড়তে এক পর্যায়ে মুষড়ে পড়ছেন প্রকৃত ঋদ্ধজনেরা।
প্রশ্নটা হলো- দোষ কি খাস কামরার, না ঐ ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের? যারা চাকরি নেওয়ার সময় শপথ নেন সততা, ন্যায়নিষ্ঠ হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবেন। নিজের পেশার প্রতি ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি সচেষ্ট থাকবেন। কিন্তু আদতে কি তা তারা করেন বা পারেন? কথায় বলে না, কয়লা ধুইলেও ময়লা যায় না। মনে রাখা জরুরি, প্রবাদ-প্রবচনগুলো এমনি এমনি হয়নি।
বাড়ছে না সৃষ্টিশীলতা, সৃজনশীলতা। সেইসব তথাকথিত পন্ডিতদের পান্ডিত্যের জাহিরে প্রকৃত বিদ্বানরা নিশ্চুপ। মেধাবীদের জায়গায় লবিং-গ্রুপিং আর তৈল মর্দনে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে মেধাহীনরা। তাই এখন মেধাহীনরাই মেধাবী আর মেধাবীরা কোণঠাসা। এছাড়া আর কি-ই বা করার আছে সজ্জনদের! তারা যদি লড়তে যায় দুর্জনের সাথে, লজ্জা তো তাদেরই। কারণ কান কাটা লোকেরা তো আর চোখের পর্দা নিয়ে ঘুরে না।
এতসব কথাগুলো কেন বললাম? একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বৈকি। নইলে ঐ তথাকথিত বিদ্যার জাহাজরা বলা শুরু করবেন- এতো কথা বলছেন যে, আপনি আবার কোথাকার কে? আরে ভাইসব, আমার পরিচয়টা জানা জরুরি নয়, যা বলেছি সে বচনগুলোর যথার্থতা আছে কিনা তা-ই বলুন না। কারণ পরিচিত মহলে আমার পরিচয়টা এরকমই, স্পষ্টভাষী।
দু’একজন জানেনও যে, শুধু নিজের স্বার্থ উদ্ধারে আমি অপাত্রে বা হাত মিলাইনা। হোক সে শিক্ষায় ব্যাপক ডিগ্রিধারী; হোক বিপুল ধনী, কিংবা ক্ষমতাশালী। কারণ ঐ যে বাল্যকালে শিখেছিলাম “দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য”। সেই বোধের নির্যাস চল্লিশের কোঠায় এসেও সোজা চলতে ও বলতে তাড়িত করেই চলেছে। যাক নিজচর্চা বেশি হচ্ছে। পরচর্চা যেমন নিন্দনীয়, আত্মপ্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়াটাও তেমনি নিন্দনীয়।
আজ থেকে কুড়ি/পঁচিশ বছর আগেও কেউ যদি যেকোন ধরনের দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হতেন, তাহলে প্রথমে তার পরিবার পরিজনই তাকে ধিক্কার দিতেন। নৈতিক স্খলন প্রকাশ হয়ে পড়লে তো স্বজনরা একটু অন্তরালেই থাকতেন। তারও ২৫/৩০ বছর আগে পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে কেউ কোন বড় ধরনের দুর্নীতি তো দূরে থাক, ঘুষই গ্রহণ করলেও তা করতেন খুবই সন্তর্পণে। যে দু’একজন করতেন তারাও একেবারেই নীরবে-নিভৃতে সেরে নিতেন অন্যায় অপকর্মটি। কিন্তু কালের আবর্তে, অবাধ ও উন্মুক্ত এই সময়ে বাকি নানান কিছুর মতোই অনেকেই ওপেন সিক্রেট করে নিয়েছেন ঘুষসহ নানা অপকর্মগুলো।
চলতি সপ্তাহে ওএসডি জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের অনৈতিক ঘটনায় কয়েকদিন ধরেই আলোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মহলের আড্ডায়। এই ‘খাস কামরা’র অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকতে কেউ কেউ (প্রয়োজন ও পদবী অনুসারে) বিশ্রামের জন্য বিছানার বদলে ইজি চেয়ার রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রশ্নটা হলো- দোষ কি খাস কামরার, না ঐ ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের? যারা চাকরি নেওয়ার সময় শপথ নেন সততা, ন্যায়নিষ্ঠ হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবেন। নিজের পেশার প্রতি ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি সচেষ্ট থাকবেন। কিন্তু আদতে কি তা তারা করেন বা পারেন? কথায় বলে না, কয়লা ধুইলেও ময়লা যায় না। মনে রাখা জরুরি, প্রবাদ-প্রবচনগুলো এমনি এমনি হয়নি।
চলতি বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়লেও দুর্নীতি কমেনি। সংস্থাটির মতে, প্রশাসনের রাজনীতিকরণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ২০১৮ সালের জুন হতে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, দুদক কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিমালা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে টিআইবি এসব তথ্য জানায়।
রাজনৈতিক পরিচয় ও আনুগত্যের কারণে অনেকেই পদোন্নতি পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করে সংস্থাটি। তারা অবশ্য প্রশাসনকে আরো গতিশীল করতে দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়ার সুপারিশ করেছে।
এ সুপারিশ কে শুনছে, আর কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশয় তো থেকেই যায়।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, বাংলাভিশন।