[caption id="attachment_1970" align="alignright" width="450"] জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। ফাইল ছবি[/caption]
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে যে আবেদন করেছিলেন, তার শুনানি গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ বিষয়ে আদেশ দেবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এটি হবে মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চূড়ান্ত আদেশ।
পুনর্বিবেচনার আদেশ কোনো মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ। এখানেও যদি মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল থাকে তবে সবশেষে তাঁর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে। এরপর দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি আসবে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে গতকাল মুজাহিদের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ হয়। এই বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আদালতে মুজাহিদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাঁকে শুনানিতে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজ দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
গতকাল রাতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের কার্যতালিকার ২ নম্বরে বিষয়টি আদেশের জন্য রাখা হয়েছে। তবে আদেশ হবে বেলা সাড়ে ১১টায়। এদিকে এই আদেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
শুনানি শেষে মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশের বুদ্ধিজীবীদের ওপর জামায়াতের যে আক্রোশ, তা আজও শেষ হয়নি। এ জন্যই অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, হাসান আজিজুল হককে হুমকি দেওয়া হয়। নিরাপত্তা চেয়ে তাঁদের আইনের আশ্রয় নিতে হয়। যদি বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের সাজা কমানো হয়, তাহলে দেশবাসী হতাশ হবে।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘মুজাহিদ সেই সময় আলবদর বাহিনীর নেতা ছিলেন। তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য আলবদরদের উজ্জীবিত করেছেন, বক্তব্য ও উসকানি দিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ জন্য সরাসরি হত্যাকারীর অবস্থানে থাকার দরকার নেই। তিনি পরিকল্পনা করেছেন, সহকর্মীদের উৎসাহিত ও উজ্জীবীত করেছেন। এটাও বিরাট অপরাধ। এসব বিষয় বিবেচনা করে আদালত সঠিকভাবেই আপিলের রায়ে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আশা করি, আপিল বিভাগের এ রায় বহাল থাকবে।’
অবশ্য খন্দকার মাহবুব হোসেন আশা করছেন, ফাঁসির বিষয়টি আদালত আইনিভাবে পুনর্বিবেচনা করবেন। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দালাল আইনে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে ৪২টি মামলা হয়েছিল। একটিতেও মুজাহিদের নাম ছিল না। আলবদর বাহিনীর তালিকায়ও তাঁর নাম পাওয়া যায়নি।
খন্দকার মাহবুব আরও বলেন, একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে যে আলবদর বাহিনী, সেটি সরাসরি পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মুজাহিদকে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তিনি কোনো বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছেন এমন সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। এ ক্ষেত্রে যদি মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকে, তবে তাঁকে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে সাজা দেওয়া যায় না।
মুজাহিদের পুনর্বিবেচনার আদেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের সূত্র বলেছে, রায়ের বিরোধিতাকারী চক্রটি নাশকতা চালাতে পারে বলে তথ্য রয়েছে। এ জন্য রাজধানীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার থেকে রাজধানীতে অতিরিক্ত সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও মাঠে থাকবেন।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে মুজাহিদ আপিল করেন। গত ১৬ জুন বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মুজাহিদ। আজ এ বিষয়ে আদেশ দেবেন সর্বোচ্চ আদালত।