বাংলাদেশ খেলছে আমরা দেখছি। আমরাও এক সময় খেলেছি, মানুষ দেখেছে। ভাবতে পারেন হয়তো বলতে চাচ্ছি, আমরা আহামরি খেলতাম। আসলে তা নয়, এখনকার দিনেও অনেক ভাল খেলোয়াড় বাংলাদেশ দলে আছে। মামুনুল, জামাল ভুঁইয়ার কথাই ধরুন না, এরা কি আমাদের সময়ের চেয়ে খারাপ, কিংবা নিন্ম মানের? মোটেও নয়। তাদের প্রতিভা নিয়ে আমার সংশয় কোনোদিন ছিল না, এখনো নেই। তবে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তাদের খেলা নিয়ে আমি কিংবা আমরা এতটুকু তৃপ্ত নই। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বাংলাদেশ পাঁচ গোল খেয়েছিল। নিজেদের দেশেও প্রায় একই অবস্থা। চার গোল। সবেচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, প্রথমার্ধে দেখলাম ওদের দুইজন মিডফিল্ডার আমাদের বক্সের কাছাকাছি বসে পাসিং ফুটবল খেলছে। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক কখনো কখনো বেশ উপরে উঠে আসছে! তাহলে অবস্থা বুঝুন।
কোচের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না। আর এত অল্প সময়ে একজন কোচকে মূল্যায়নও করা যায় না। তবে মঙ্গলবার সকারুদের বিপক্ষে তিনি যে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই হয়। রায়হান-কোমল যে পজিশনে খেলেছে ওদের তো ওখানে খেলার কথা নয়। দুজনকে প্রায় পুরুটা সময় অস্বস্তিতে থাকতে দেখা গেছে। মামুনুলকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেও প্রথম ৪৩ মিনিট এতটা চাপে পড়তে হতো না। দ্বিতীয়ার্ধে জামাল ভুঁইয়া যদি ওইটুকু খেলতে না পারতেন তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গোছানোভাব খেলায় দেখা যায়, কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। আপনি মাঝমাঠে কিংবা উপরে খেলতে না পারলে বল ঘুরেফিরে আপনার রক্ষণেই আসবে। আপনার ওপর চাপ বাড়বে। এই সহজ সত্যটা ফুটবল খেলুড়েদের সহজে বোঝার কথা। বুঝবেনও। কিন্তু মাঝমাঠে ঠিক মতো খেলতে হলে আপনার পজিশন বজায় রাখতে হবে। ছেলেরা প্রথমার্ধে কেন সেটা পারল না, সেটাই বিষ্ময়ের।
তাজিকিস্তানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে আমরা যেখানে এগিয়ে গিয়ে ড্র করেছিলাম, সেখানে ওদের দেশে গিয়ে পাঁচ গোল খেয়ে আসলাম! হ্যাঁ, আবহাওয়া আমাদের বিপক্ষে ছিল মানছি, মাঠ ছিল টার্ফের সেটাও মানছি। তাই বলে যাদের সঙ্গে আগে আমরা ড্র করেছি, তাদের কাছে পাঁচ গোল খাওয়াটা মানতে কষ্ট হয়। ওই ম্যাচে ছেলেরা আরো বেশি তালগোল পাকিয়েছিল।
মঙ্গলবার গোলরক্ষক সোহেল তার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। যে চারটি গোল তিনি হজম করেছেন তাতে করার কিছু ছিল না। ডি-বক্সের খানিক দূরে মোইকে ফেলে দেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার। ফাউল পেয়ে নিজেই কিক নেন। হালকা চিপে বল তুলে দেন ডি-বক্সের আকাশে। রায়হানের কাছাকাছি ছিলেন টিম কাহিল। একটু সামনে এগিয়ে উড়ে আসা বলে মাথা লাগান। তাতেই প্রথম গোল। এই পজিশনে কাহিলের মতো খেলোয়াড়কে আপনি মার্কে না রাখতে পারলে কী করে হবে। মানলাম এরিয়াল বলে সে শক্তিশালি। লম্বাদেহি। তাই বলে তাকে একটু তো বাধা দিতে হবে। এত অনায়াস হেড কেউ করার সুযোগ পেলে, তা থেকে গোল না আসলে সেটাই বরং বিস্ময়ের হতো। দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে অনেকের মতো আমারও প্রশ্ন আছে। কাহিলের বিরুদ্ধে রেফারির বাঁশি বাজানো উচিত ছিল। আপনি গোলরক্ষককে এভাবে বাধা দিতে পারেন না। তার ওপর বল দেখলাম হাতে লেগেছিল। তৃতীয় গোলটা তো দেখার মতো। পাঁচটা পাসের পর মোই নাসিরুলকে বিট করে বল দেন কাহিলকে। কাহিলের মতো স্ট্রাইকার ওই পজিশনে বল পেয়ে ভুল করবেন না এটাই স্বাভাবিক। মঙ্গলবার কাহিল একাই করলেন তিন গোল। কাগজে কলমে তিনি হয়তো সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু আমার কাছে সেরা খেলোয়াড় ওই মোই। সারামাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। কখনো নিজের পজিশন বুঝতে দেননি বাংলাদেশকে। তার বল ড্রিস্ট্রিবিউশন ক্ষমতা মুগ্ধ করার মতো।
দেশি কোচ নাকি বিদেশি কোচ? এমন একটা প্রশ্ন আমাদের দেশে হরহামেশা শোনা যায়। আমি বিদেশি কোচের বিপক্ষে নই। তবে তাদের মানের দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। টাকা দিয়ে সঠিক মানের কোচ আমরা ছেলেদের দিতে পারছি না কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। দেশের সর্বোচ্চ লিগে কিন্তু দেশি কোচরা বিদেশিদের চোখে চোখ রাখছে। শিরোপাও জিতছে। জাতীয় দলেও তাদের ব্যাপারে ভেবে দেখা যেতে পারে।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সামগ্রিক অর্থে বাংলাদেশের অবস্থা লেজেগোবরে হলেও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে ৪৩ মিনিটের পর গোল না খাওয়ার জন্য লোপেজের ছেলেরা একটু প্রশংসা পেতেই পারে। তবে সেই প্রশংসার পরিমাণটা কমিয়ে দিচ্ছে ওই ‘চার গোল’!
কায়সার হামিদ: জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক তারকা ফুটবলার।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ