গ্রামের নাম ভাঙ্গিডাঙ্গী। একাত্তর সালে পদ্মা পাড়ের এ গ্রামটি ছিলো ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার অধীনে। এখন চরভদ্রাসন উপজেলায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই গ্রামটিতে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় একযোগে হামলা চালায় পাকিস্তানী সেনারা। আর তাদের নেতৃত্বে ছিলো আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও তার বোন জামাই মাওলানা মো. হাম্মদ হোসেন।
ফরিদপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নূর মো. বাবর জানান, মুজাহিদ ও তার বোন জামাইয়ের নেতৃত্বে গ্রামের পুরুষদের লাইন ধরে দাঁড় করানো হয় পদ্মা নদীর পাড়ে। এরপর ১২২ জনকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় পদ্মা নদীতে।
তিনি আরও জানান, নৃশংসতার এখানেই শেষ নয়, ব্যাপক হত্যাকান্ডের পর গ্রামের নারীরা যখন শিশুদের নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, সে সময়ে মরা পদ্মার একটি সাঁকো পার হওয়ার সময় ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয় নারী ও শিশুদেরকে (যদিও এই অভিযোগটি ট্রাইব্যুনালের উচ্চ আদালতে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় বাতিল হয়ে যায়)।
একাত্তর সালের ১৩ মে মুজাহিদ জিপে করে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার খলিলপুর বাজারে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে যান। সেখানে সভা করে মুজাহিদ হিন্দু অধ্যুষিত বাকচর গ্রামে হামলা চালায়। এতে নয়জন হিন্দু ব্যক্তি নিহত হন। মুজাহিদের সহযোগিতায় রাজাকাররা এক হিন্দু নারীকেও ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে বাকচর গ্রামের হিন্দুরা দেশত্যাগে বাধ্য হন। এই এক অভিযোগে মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। পরে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে এ হত্যাকান্ডে তার যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখে।
বাকচর হত্যাকান্ড মামলার অন্যতম সাক্ষী রনজিৎ কুমার নাথ বাবু জানান, সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও শরীর শিউরে উঠে। কি নির্যাতনই না করেছিলেন তিনি। সেদিনের অসহ্য নির্যাতন বহন করে আজও বেঁচে আছেন বাবু নাথ।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ