ফুলকপি চাষে আগাম লাভবান কুষ্টিয়ার কৃষকরা
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৯-২৪ ১২:০৯:৩৮
আগাম ফুলকপি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষকরা। বছরের পুরোটা সময় তারা ‘আগাম জাতের’ ফুলকপি চাষ করছেন। ফুলকপির ভরা মৌসুমে ভালো দাম না পেলেও অসময়ে ফুলকপি বিক্রি করে পুষিয়ে নিচ্ছেন তারা। তাই আগাম জাতের ফুলকপির দিকেই ঝুঁকছেন চাষিরা। ধানসহ অন্যান্য ফসলে চাষিরা যখন লাভের পরিবর্তে লোকসানের মুখ দেখছেন, তখন আগাম ফুলকপি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মিরপুর উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহায়তায় উপজেলার কৃষকরা আগাম জাতের এ ফুলকপি চাষ করে ভালো দাম পাচ্ছেন।
মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের আবুরী এলাকার কৃষক করিম মিয়া জানান, ধান-গম চাষ করে আমরা খুব একটা লাভবান হতে পারিনি। ধান চাষ করে লোকসান গুনতে হয় আমাদের। তাই ফুলকপি চাষ করছি। শীতকালে ফুলকপির ভরা মৌসুমে দাম একটু কম হয়। তবে অন্যান্য সময় বেশ ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই আমরা সারা বছরই এখন ফুলকপি চাষ করছি।
তিনি আরো জানান, এছর আমি আমার দুই বিঘা জমিতে আগাম লিডার জাতের ফুলকপির চাষ করেছি। বিঘায় প্রায় ৬ হাজারের মতো গাছ রয়েছে। খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি ৮-১০ হাজার টাকা। বাজারে এখন যে দাম রয়েছে তাতে আমি বিঘাপ্রতি ৬০-৭০ হাজার টাকা পাবো।
আরেকজন কৃষক আকরামুল হক বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় ফুলকপি চাষ অধিক লাভজনক। আমি দেড় বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপি চাষ করেছি। জমি থেকেই পাইকারী ক্রেতারা ৩০-৩৫ টাকা কেজি করে ফুলকপি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় এক বিঘা জমিতে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।
সিদ্দিক আলী নামের আরেক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, এর আগে দেখা যেত শীতকালে জমিতে ফুলকপির চাষ হতো। সে সময় ভালো দাম পাওয়া যেতো না। কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা এখন সারা বছর ফুলকপির চাষ করি।
তিনি আরও জানান, এখানকার ফুলকপি ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ ও সিলেটে রপ্তানি করি। এছাড়া স্থানীয় হাট-বাজার ও কুষ্টিয়া শহরেও আমরা বিক্রি করি। ধান, গম, ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজের তুলনায় অধিক লাভ এই আগাম ফুলকপিতে। তাই এই অঞ্চলের মানুষ এখন ফুলকপি চাষে ঝুঁকছে।
একই এলাকার কৃষক সবুজ মিয়া জানান, আমরা স্থানীয় বাজারের চেয়ে বাইরে রপ্তানি করলে ভালো দাম পাই। এজন্য কৃষি অফিসের সহায়তায় আগাম ফুলকপি উৎপাদন করে বাজারজাত করছি। এছাড়াও কৃষি বিপনন কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা ন্যায্য মূল্যে ফসলাদি বিক্রি করতে পারছি। সমবায় ভিত্তিকভাবেও ফুলকপিসহ অনান্য সবজি চাষাবাদ করে অন্য জেলায় বিক্রি করি। এতে সবজির ন্যায্য মূল্য পেয়ে লাভবান হচ্ছি।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি সবজি জাষের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই অঞলের মানুষ আধুনিক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। চাষিরা আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। ফলে তারা ফুলকপি চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
সাধারণত শীতকালেই আগাম, মধ্যম ও নাবী মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি আবাদ করা যায়। এছাড়া গ্রীষ্মকালেও চাষের উপযোগী জাত রয়েছে।
তিনি আরো জানান, মালিহাদ ইউনিয়নের বিশেষ করে সবজি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাতকরণের জন্য আমরা কৃষি বিপনন কেন্দ্র স্থাপন করি এবং এফএমএ কমিটির গঠন করি। এর ফলে উক্ত এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পাচ্ছে। বর্তমানে কৃষি অফিসের পরামর্শে আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে তারা লাভবান হচ্ছেন।