প্রতিবছর মুহাররম ও শাবান মাসে পবিত্র কাবাঘর ধোয়া হয়। এটি মূলত একটি পবিত্র উৎসব। পবিত্র কাবা শরিফ ধৌত করার পবিত্র আয়োজন। সৌদি আরব ও মসজিদুল হারাম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পালিত ঐতিহাসিক রীতি। সৌদি আরবের মহামান্য বাদশাহ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা এ উৎসব অংশ নেন।
এ বছর কাবা ঘর ধোয়ার পবিত্র উৎসবে অংশ গ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ। সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। এবারের কাবা শরিফ ধোয়ার উৎসবে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের প্রতিনিধি হিসেবে মক্কার গভর্নর প্রিন্স খালিদ আল ফয়সাল নেতৃত্ব দেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী কিং আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজে দ্রুত দেশে ফিরে আসেন বলে যথা সময়ে আমন্ত্রণপত্রটি তার হাতে এসে পৌছায়নি। দেশে ফেরার পর তিনি আমন্ত্রণপত্রটি হাতে পান। তখন আবার নতুন করে সেখানে গিয়ে কাবা ঘর ধৌত উৎসবে অংশ গ্রহণ করার কোনো সুযোগ বাকি ছিল না। আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে ১৪৪১ হিজরি সনের মুহাররম মাসে অনুষ্ঠিত ধৌত উৎসবে অংশ গ্রহণের জন্য শেখ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহর নামে একটি প্রবেশ কার্ড প্রদান করা হয়। এ ছাড়া আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে পাঠানো একটি আরবী নির্দেশিকায় ধৌত উৎসবের সময় কাবা ঘরে কোনো ক্যামেরাম্যান প্রবেশ করতে না পারা, কার্ডধারীরাও কেউ মোবাইল সঙ্গে নিতে না পারা এবং কাবা ঘরের ভেতরে প্রবেশের জন্য কার্ডটি সর্বদা সঙ্গে রাখাসহ বিভিন্ন নিয়ম-রীতি কথা উল্লেখ করা হয়।
এ সম্পর্কে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শুকরিয়া জ্ঞাপণ করছি— অত্যন্ত পবিত্র একটি কাজে তিনি আমার মতো একজন বান্দার নাম মনোনীত করেছেন। এটা আমার জীবনের অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। তবে দুঃখ প্রকাশ করছি— কাবা ঘর ধৌত করার মহতি ও পবিত্র উৎসবে আমি অংশ গ্রহণ করতে পারিনি। কারণ ধৌত কার্য সম্পন্ন হওয়ার দিন আমার কাছে আমন্ত্রণপত্রটি এসে পৌছেছে। আল্লাহ যেন তার বান্দার এ অক্ষমতাকে ক্ষমা করেন। আমিন। আমি মনে করি এবারের পবিত্র হজব্রত পালনে দেশে শীর্ঘস্থানীয় আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখদের নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দীর্ঘায়ূ কামনাসহ দেশ পরিচালনায় তাদের সফল নেতৃত্বের স্থায়ীত্বের জন্য আমরা যে দোয়া-মোনাজাত করেছি, এর পুরস্কার স্বরুপ আমার কপালে এ সম্মান জুটেছে। মহান প্রভুর কাছে বিনীত প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাকে তার পবিত্র ঘর ধৌত করার একজন কর্মী হিসেবে আবারও কবুল করেন। আমিন’।
যুবরাজ খালিদের সঙ্গে এবারের ধৌত উৎসবেউপস্থিত ছিলেন পবিত্র কাবা ঘরের প্রধান ইমাম শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস, মক্কার ডেপুটি গভর্নর প্রিন্স বদর বিন সুলতান, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, জরুরি বাহিনীর প্রধান এবং হজ নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডার ও অন্যান্য নিরাপত্তারক্ষীরা। শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস বলেন, ‘এটি রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। মক্কা বিজয়ের পর নির্দিষ্ট দিনে তিনি এ কাজটি করেছেন। এ ছাড়া পবিত্র কুরআনেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ মহান পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তাওয়াফকারী ও নামাজে দন্ডায়মান এবং রুকু-সেজদাকারীদের জন্য আমার গৃহকে পবিত্র রাখ।’ (সুরা হজ, আয়াত : ২৬)। সুতরাং আল্লাহ মহানের নির্দেশনা ও রাসুলের (সা.) সুন্নাত অনুযায়ী সৌদি সরকার প্রতি বছর মহতি এই কাজটি আঞ্জাম দেয়।’
প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা হয় সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর (হজ) মাকসুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার জানা মতে বাংলাদেশ থেকে এই প্রথম কোনো মন্ত্রীকে পবিত্র কাবা ঘর ধোয়ার উৎসব সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু দুঃখ ও আফসোসের বিষয় হলো— মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় দেশে ফিরে যাওয়া পরের দিন রাতে অর্থ্যাৎ পবিত্র কাবাঘর ধৌত করার দিনের আগের রাতে আমন্ত্রণপত্রটি আমাদের হাতে এসে পৌছেছে। আমন্ত্রণপত্রটি হাতে পেয়ে আমি থ বনে গেলাম। এটা কি হলো ভাবতে ভাবতে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়কে পাঠালাম। তখন আসলে প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের আবার এসে এই উৎসবে অংশ গ্রহণ করার কোনো সুযোগ ছিল না। সুখের বিষয় হচ্ছে, একবার যেহেতু পবিত্র এ উৎসবে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের নাম মনোনীত হয়েছে, ভবিষ্যতে এ তালিকাতে বাংলাদেশ থাকবে ইনশা আল্লাহ’।
পবিত্র কাবা শরিফ ধৌত কার্যক্রমটি সৌদি আরবে খুবই বরকতময় একটি উৎসব হিসেবে পালিত হয় এবং এ উৎসবে অংশ গ্রহণ করতে পারাকে সবাই নিজের সুভাগ্য হিসেবে মনে করে থাকে। আররি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছর দুইবার, মুহাররম ও শাবান মাসে কাবা শরিফের ভেতরে ধোয়া হয় এবং কাবার গায়ে নতুন গিলাফ পরানো হয় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে।
পবিত্র জমজমের পানিতে সুগন্ধি আতর, জাফরান মিশিয়ে কাপড়ের টুকরো এবং খেজুর পাতা ব্যবহার করে পবিত্র কাবা ঘরের মেঝে ও দেয়াল ধৌত করা হয়। কাবা ঘর ধোয়ার জন্য ভেতরে প্রবেশের আগে তাওয়াফ ও দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা হয়। পরিষ্কার করার পর মেঝে এবং দেয়াল সাদা কাপড় এবং উন্নতমানের টিস্যু দিয়ে শুকানো হয়। কাবা শরিফ ধোয়ার সময় দুই ঘণ্টা দরজা খোলা থাকে। এরপর বের হয়ে সবাই ধারাবাহিকভাবে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন এবং পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করেন। তাওয়াফ শেষে কেউ কেউ মাকামে ইবরাহিমেও দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস