বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে বাজারে ইতি বাচক প্রভাব পরতে শুরু করেছে। পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে। স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ফোনে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
সে মোতাবেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পেঁয়াজ পরিবহন নির্বিঘ করাব জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ভোমড়া, সোনা মসজিদ, হিলি এবং বেনাপোল বন্দরে পেঁয়াজ আমদানি নির্বিঘ করতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং এর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের ১০জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ আজ
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর ২০১৯) থেকে কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, যশোর, দিনাজপুর, পাবনা, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বাজারগুলোতে তদারকি শুরু করেছেন।
এছাড়াও প্রতিটি জেলা প্রশাসন থেকেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এলসি’র মাধ্যমে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বন্দরে খালাশ করা শুরু হয়েছে। এছাড়া মায়ানমার থেকে বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে টেকনাফ বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজ এবং দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি হাটগুলোতে বিক্রিত পেঁয়াজ দ্রুত সারাদেশে নির্বিঘে পৌছে যাচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।
দেশে পেঁয়াজের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ(টিসিবি) এর মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় শুরু করেছে, ১৬টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা মূল্যে এ পেঁয়াজ বিক্রয় চলছিল। আজ (১ অক্টোবর) থেকে এ ট্রাক সেলের সংখ্যা ৩৫ টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এতে করে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ ক্রয় করার সুযোগ পাচ্ছেন।
সরকারি হিসাব মতে দেশে বছরে মোট পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩.৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। এর ৩০% পেঁয়াজ স্বাভাবিক ভাবেই নষ্ট হয়। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বছরে আমদানি হয়ে থাকে ৮ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন। হিসাব মোতাবেক দেশে পেঁয়াজের কোন সংকট নেই। দেশের পেঁয়াজ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর পাইকারি হাট-বাজারে বিপুল পরিমান পেঁয়াজ ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে, ফলে সারা দেশের হাট-বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত। ফলে বাজারে দেশি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই।
সহজ পরিবহনের কারনে সারা বছরই ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে কিছুদিন আগে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস(এমইপি) নির্ধারন করে দিয়েছে। আগে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল কম-বেশি ২৫০ মার্কিন ডলার। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত কর্তৃক তা ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারন করে দেয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মায়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। বাংলাদেশ মিশর ও তুরস্ক থেকেও এলসি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুর করেছে। উক্ত পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে, অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাবে। তাছাড়া ভারত থেকে এবং দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ শিঘ্রই বাজারে আসবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা করেছে, ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানিবৃদ্ধি এবং নৈতিকতার সাথে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ করা হয়েছে। কোন ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুত, কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা, স্বাভাবিক সরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা যায়, দেশে কোন বাজারেই পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। ভোক্তাদের আতংকিত হবার কোন কারণ নেই, মূল্য দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
সানবিডি/ঢাকা/এসআই