বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, আমাদের শিল্প খাতে পুঁজিবাজারের অবদান খুবই কম। পুঁজিবাজার থেকে শিল্প খাতে অবদান বড়াতে এবং এই খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে সবাইকে শিখতে হবে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই।
রবিবার (০৬ অক্টোবর) রাজধানীতে বিএসইসির নিজস্ব কার্যালয়ে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, আমেরিকার শিল্পায়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা ৫৫ শতাংশ। যেখানে আমাদের পুঁজিবাজারের অবদান ১৫ শতাংশ বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে ১০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। কারন আমাদের দেশে পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর বর্তমান আকারের সঙ্গে জিডিপির তুলনা করে ওই অবদান গণনা করা হয়। কিন্তু তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো শুরুতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেনি। সেগুলো ব্যবসা চালু হওয়ার পরে পুঁজিবাজারে এসেছে। আগে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের নিজস্ব অর্থায়ন ও ব্যাংক ঋণ দিয়ে কার্যক্রম চালিয়েছে।
পুঁজিবাজারকে সমৃদ্ধের পথে নিতে হলে, শুধুমাত্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষা নিতে হবে।যে কারনে এবারের বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকস, ব্রোকারেজ হাউজ, অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি ও ইস্যুয়ার কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিনিয়োগ শিক্ষার জন্য টার্গেট করা হয়। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
খায়রুল হোসেন বলেন, প্রথমবার আমরা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিয়ে মিছিলের মতো করে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালন করেছিলাম। ওইসময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ওইসময় দেশের সকল মানুষকে পুঁজিবাজার বলে যে কিছু আছে, সেটা সর্ম্পক্যে জানানো হয়। দ্বিতীয়বার আমরা কৃষিবীদ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠান করেছি। ওখানে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান করা হয়। এছাড়া স্টেকহোল্ডাররা সপ্তাহব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য শিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম আয়োজন করে।
তিনি বলেন, বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ চালুর আগে থেকেই আমরা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম আয়োজন করি। তবে সেটা আনুষ্ঠানিক রুপ পায় ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপি বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে। এরপরে আইওএসকো একইবছর থেকে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ চালুর পর থেকে বিএসইসিও পালন করে আসছে।
এসময় বিএসইসির কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে আইওএসকোর সদস্যভুক্ত অন্যান্য দেশগুলো বিনিয়োগ সপ্তাহ নিয়ে কি কার্যক্রম পালন করে, তা আপনারা অনুসরন করবেন। দেখতে হবে আমাদের শেয়ারবাজারকে প্রমোট করার জন্য সেখান থেকে কি শেখার আছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে ও স্টেকহোল্ডারদের মাঝেও জবাবদিহিতা তৈরী হচ্ছে। কারন কমপ্লায়েন্স পরিপালন না করলে শাস্তির আওতায় পড়ার বিষয়টি তারা বুঝতে পারছে। কাজেই সুশাষন বৃদ্ধি করতে বিনিয়োগ শিক্ষা ভূমিকা রাখছে। যাতে আমরা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আর ১০ বছরে পরে একটি শেয়ারবাজারের জন্য যে ধরনের বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর দরকার, তা দেখতে পাব। আর প্রত্যেকটি স্টেকহোল্ডারের জবাবদিহি ক্ষেত্রে ও কার কি দায়িত্ব, তা সুস্পষ্টভাবে পরিস্কার হয়ে যাবে।
বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পরে সচিবদের জন্য একটি অনুষ্ঠান করার অনুরোধ এসেছে বলে জানিয়েছেন খায়রুল হোসেন। এছাড়া পুলিশ ও সেনাবাহিনীর জন্য অনুষ্ঠান করার অনুরোধ এসেছে। কাজেই ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি কার্যক্রম শুধুমাত্র অ আ ক খ বিষয়েই ধারনা দেয় না বলে জানান তিনি। এটি শেয়ারবাজারের গুরুত্ব, কোথা থেকে বাহির হয়, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে শেয়ারবাজার গুরুত্বপূর্ণ কেনো, ব্যাংক ঋণ কেনো বন্ধ করতে হবে, কেনো ঋণ খেলাপির ক্ষেত্রে কিছু আদায় করা যায় না ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানের সীমা বাড়াচ্ছে। এর মাধ্যমে বর্তমান জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে পরিধি যখন বাড়বে, তখন অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে।
এবারের বিনিয়োগকারী সপ্তাহ অত্যান্ত ফলপ্রসু ছিল জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমি নিজে চারটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেও পুরো সপ্তাহের সব অনুষ্ঠানেই দৃষ্টি ছিল। আমার ভালো সাড়া পেয়েছি। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আগ্রহ দেখেছি। ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যেও আগ্রহ ছিল। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল, বিএমবিএ, বিআইসিএম থেকে শুরু করে অনেকেই বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যা সমাজ জীবনে ব্যাপক নাড়া দিয়ে গেছে। বিষয়টি সর্ম্পক্যে অর্থমন্ত্রী অবহিত আছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীও এ সর্ম্পক্যে ধারনা রাখেন।
নির্বাহি পরিচালক সাইফুর রহমানকে অনুরোধ জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা প্রতিবছর বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে কিছু উদ্ভাবন করেন। যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সুবিধা দেবে। যাতে সবার যেনো সেবার দ্বার উম্মোচিত হয়। এবার যেমন ‘বিনিয়োগকারী অভিযোগ নিষ্পত্তির মডিউল’ চালু করা হয়েছে।
খায়রুল হোসেন বলেন, আমার অত্যান্ত সৌভাগ্য যে, এই কমিশনে আমার উপরে কোন দায়িত্ব আসলেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এছাড়া স্টেকহোল্ডাররাও এগিয়ে এসেছে। যে কারনে আমি মনে করব, চেয়ারম্যান হিসাবে আমি লাকি সময় পার করে গেলাম।
অনুষ্ঠানে কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারী সপ্তাহ নিয়ে ভালো অনুষ্ঠান করা যাবে। এই অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা এবং গুরুত্ব অনেক বেশি। এতে বিনিয়োগকারীসহ স্টেকহোল্ডারদের বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত করা গেলে, ফলাফল আসবে। আমাদের আর্থিক জ্ঞানের সাক্ষরতার হার যেহেতু ১৮ শতাংশের মধ্যে, তাহলে বুঝতে হবে ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর আর্থিক সাক্ষরতা নেই। তাদের মধ্যে এই সাক্ষরতার হার বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন ‘বিনিয়োগকারী অভিযোগ নিষ্পত্তির মডিউল’ ফলোদায়ক ও কার্যকর। এই মডিউলটি চালুর ২দিনের মধ্যেই ১টি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। সেটি সাধারন প্রক্রিয়ায় করতে গেলে হয়তো ১ মাস লাগতো। কারন এতে অনেক প্রসিডিউর অনুসরন করতে হতো।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার স্বপন কুমার বালা, খন্দকার কামালউজ্জামান ও অন্যান্য কর্মকর্তারা।