অজানা রহস্যে আমাজন অরণ্য। ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই অরণ্যের প্রায় ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত।
আমাজান অরণ্য আমাজন নদীর অববাহিকায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরক্ষীয় বন, যা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগের ৯টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। আমাজন অরণ্য ৬০ ভাগ ব্রাজিলে, ১৩ ভাগ পেরুতে এবং বাকি অংশ কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গুয়ানা, সুরিনাম এবং ফ্রেঞ্চ গুয়ানাতে। এ বনে আছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট–পতঙ্গ, ১,২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব–অণুজীব। এখানকার প্রাণীবৈচিত্র্য অতুলনীয়। আমাজন অরণ্যের গুরুত্ব অনেক। পৃথিবীর ২০ ভাগ অক্সিজেন আসে আমাজন থেকে। আমাজন বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্যের একটি। এই বনের নদী বা আমাজন নদী বেশির ভাগ নদীর উৎস। এই নদী বিশ্বে প্রচুর পানির জোগান দিয়ে থাকে। এখানে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড় আছে। এছাড়া ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরিসৃপ এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তনপায়ী প্রাণী আছে। এছাড়া আমাজন নদীতে ৩০০০ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী আছে।
আমাজন বন হল আমাজন বেসিনে (আমাজন নদীর অববাহিকায়) অবস্থিত পৃথিবীর সবচে বড় নিরক্ষীয় বন (আয়তন সাড়ে ৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার বা ৩.৪ মিলিয়ন বর্গ মাইল), যা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগে অবস্থিত ৯টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। দেশ গুলো হলঃ ব্রাজিল (আমাজনের মোট আয়তনের ৬০% ব্রাজিলে), পেরু (১৩%), বলিভিয়া, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, ফ্রেঞ্চ গায়ানা এবং গায়ানা। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মোট আয়তনের ৪০% এই বনের দখলে। আমাজন বন অত্যন্ত দুর্গম। তবে দ্ক্ষ গাইড সহ নদী পথে ভ্রমন এই নিরক্ষীয় বনের প্রাকৃতিক বিস্ময় দেখার সবচে ভাল উপায়।
বনের প্রকৃতিঃ
আমাজনকে রেইনফরেস্ট (The Amazon Rainforest) বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই না যে এখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়। বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত (বর্ষা মৌসুমে) এবং গরম আবহাওয়ার কারনে। প্রচন্ড গরমের কারনে এখানে বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশি যা আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার অন্যতম কারন।
এই গরম আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতার কারনে এ বনে উদ্ভিদ ও প্রানিকুলের বৈচিত্রময় সমাহার দেখা যায়। এখানে আছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট–পতঙ্গ, ১,২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রানিসহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব–অনুজীব। এখানকার প্রানিবৈচিত্র অতুলনীয়। মজার বিষয় হল হাজারো রকমের প্রানির সমাহার থাকলেও এখানকার ইকোসিস্টেম অত্যন্ত শক্তিশালী যা মিলিয়ন বছর ধরে টিকে আছে।
স্তন্যপায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জাগুয়ার, গোলাপি ডলফিন (একমাত্র প্রজাতির ডলফিন যা স্বাদু পানিতে বাস করে), তামানডুয়া (Tamandua), তাপির (Tapir), মানাতি (Manatee), ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, বাদুড় ইত্যাদি।
আমাজন নদঃ আমাজন বেসিনে অবস্থিত এ নদ আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদ এবং নীল নদের পরে দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদ। এর প্রায় ১,১০০টি উপনদী আছে যার মধ্যে ১৭টির দৈর্ঘ্য ১০০০ মাইলের বেশি। এ নদ আমাজন অঞ্চলের প্রাণিবৈচিত্র্যের প্রধান উৎস এবং হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা এ জঙ্গলের সূতিকাগার।
এ নদের বিস্ময়কর তথ্য
১। এ নদের আয়তন আমেরিকার সবচেয়ে বড় নদী মিসিসিপির আয়তনের ১১ গুণ।
২। বর্ষা মৌসুমে এ নদের মুখ (আটলান্টিকের সঙ্গে যেখানে মিলিত হয়) প্রায় ৩০০ মাইল চওড়া থাকে।
৩। বর্ষা মৌসুমে এ নদের মোহনা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫,৭৮৭,০৩৭ ঘনফুট পানি আটলান্টিকে নিক্ষিপ্ত হয়।
৪। এ নদের পানি প্রবাহের গতি এত বেশি যে, আটলান্টিকে প্রবেশের পর তা লোনা পানির সঙ্গে মেশার আগেই সমুদ্রের বুকে ১২৫ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে।৫। প্রতিদিন ১০৬ মিলিয়ন ঘনফুট পলিমাটি আমাজনের পানির সঙ্গে আটলান্টিকে গিয়ে পড়ছে।
৭। পৃথিবীর মোট স্বাদু পানির এক–পঞ্চমাংশ আসে আমাজন নদ থেকে।
আমাজন নিয়ে যত মিথ
পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা বিশ্বাস করত, বিশাল এ বনের মধ্যেই কোথাও লুকিয়ে আছে এলডোরাডো নামের এক গুপ্ত শহর। ধারণা করা হতো এই শহরটি পুরোটা স্বর্ণের। এই ভ্রান্ত ধারণাটি এসেছে গ্রিক পৌরাণিক গল্প থেকে।
সে গল্পে বলা হয়েছে, ‘এলডোরাডো’ নামক সোনায় মোড়ানো শহরটি পাহারা দেয় এক শ্রেণির বিশেষ নারী যোদ্ধারা। যাদের গল্পে ‘আমাজন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রীরা প্রতিযোগিতায় নামে এই ‘এলডোরাডো’ শহর আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু কেউ এই কাল্পনিক শহরের খোঁজ পায়নি। শহরের সন্ধান না পেলেও স্থায়ী হয়ে যায় সেই নারী যোদ্ধাদের নাম। তাদের নামানুসারেই এই জঙ্গলের নাম হয় আমাজন জঙ্গল।
আমাজনকে রেইনফরেস্ট বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে, এখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়। বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত (বর্ষা মৌসুমে) এবং গরম আবহাওয়ার কারণে। প্রচন্ড গরমের কারণে এখানে বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশিÑযা আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ।
আমাজন বনের কিছু বিস্ময়কর তথ্য
১। বিশ্বের নিরক্ষীয় বনের অর্ধেকের বেশি অঞ্চল এই আমাজনে।
২। প্রাণিকুলের শনাক্তকৃত দশ ভাগের একভাগ প্রাণী এই অঞ্চলে বাস করে।
৩। পৃথিবীর সব পাখির পাঁচভাগের একভাগ এই বনের অধিবাসী।
৪। গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৭৫,০০০ ধরনের বৃক্ষ পাওয়া যায়।
৫। বিশ্বের মোট ওষুধের ২৫ ভাগ কাঁচামাল আসে এ বনের ৪০০ প্রজাতির গাছ থেকে।
৬। পেরুর একটি মাত্র গাছে ৪৩ প্রজাতির পিঁপড়ার সন্ধান পাওয়া গেছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসআই