একটি সুন্দর সিভি চাকুরি পূর্ব শর্ত

প্রকাশ: ২০১৫-১১-২১ ১০:৪৮:০৪


Interviewচাকুরি সন্ধানের ক্ষেত্রে অনেক আবেদনকারীই সাক্ষাৎকারের ডাক পান না। এমনও আছেন অনেকবার অনেক প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দিয়েছেন কিন্তু সাক্ষাৎকারের ডাক পাননি। অনেক কারণেই এমন ঘটতে পারে। আপনি যে ধরনের চাকুরি চাইছেন, সিভি হয়তো তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অথবা সিভিতে আপনার তথ্যাদি উপস্থাপনে কোথাও ত্রুটি রয়ে গেছে কিংবা সিভিতে সব ধরনের তথ্যই উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও উপস্থাপন কৌশলে কোথাও হয়ত ভুল হয়েছে।

আবার এমনও হতে পারে, আপনার যোগ্যতা প্রমাণে সবচেয়ে উপযুক্ত তথ্যটিই অন্য সব তথ্যের আড়ালে পড়ে গেছে এবং নিয়োগদাতার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। সিভিতে এমন অজস্র কৌশলগত দুর্বলতা থেকে যেতে পারে, যা কাম্য নয়। তাহলে জেনে নেয়া যাক কিভাবে সিভি তৈরি করা যায়।

বর্তমানে বায়োডাটা শব্দটির পরিবর্তে আরও দুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়। একটি রেজুমে (Resume) আরেকটি সিভি (CV) অর্থাৎ কারিকুলাম ভিটা (Curriculum Vita)। সিভির পরিবর্তে রেজুমে শব্দটি প্রয়োগ করা হলেও কারিকুলাম ভিটা কিন্তু প্রায়োগিক অর্থে রেজুমে বা সিভি নয়। যদিও সিভি এবং রেজুমে শব্দ দুটি একই উদ্দেশ্য সাধন করে, দুটোই নিয়োগকর্তার কাছে একজন আদর্শ প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। এদের পার্থক্য মূলত গঠন, বিবরণ, দৈর্ঘ্য এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত নিজ নিজ সিভি তৈরি করতে শেখা। তৈরি করা সিভিতে প্রকারভেদ হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে সিভি তৈরির ফরমেট ৩টি :

১) ক্রনোলজিক্যাল,

২) ফাংশনাল এবং

৩) কম্বাইন্ড।

ক্রনোলজিক্যাল সিভি:

ক্রনোলজিক্যাল ফরমেট সবচেয়ে প্রচলিত সিভি ফরমেট। চাকুরির পদবি, চাকরির স্থান এবং চাকুরির কার্যকালকে হেডিং হিসেবে এতে হাইলাইট করা হয়। ক্রনোলজিক্যাল ফরমেট তখনই উপযোগী হবে যখন আপনি একই ধরনের পেশায় বহুদিন কর্মরত ছিলেন। এবং আপনার কাজের ধারা হল ক্রমোন্নতি। এই ফরমেটে সর্বশেষ পেশাগত অবস্থান, প্রতিষ্ঠান, দায়িত্ব ও দায়িত্বকাল অভিজ্ঞতার অংশে প্রথমে চলে আসে। নিয়োগদাতারা এ ধরনের ক্রনোলজি পছন্দ করেন। কারণ তারা প্রার্থীর সর্বশেষ পেশাগত অবস্থা পলকেই জানতে পারেন এ ধরনের সিভি থেকে।

ফাংশনাল সিভি:

 এ ধরনের সিভিতে দক্ষতাভিত্তিক হেডিং ব্যবহৃত হয়। যে ক্ষেত্রে আপনি সর্বোত্তম দক্ষতা এবং সাফল্য দেখিয়েছেন তা আগে আসে। ফলে তা সময়ানুক্রমিক হয় না। এ ফরমেটে আপনার অর্জনগুলোর তালিকা থেকে আলাদা একটা সংক্ষিপ্ত অংশে কর্মধারাক্রম (work history) সতর্কভাবে উল্লেখ করতে হবে। ফাংশনাল ফরমেট তখনই উপযোগী হবে যখন আপনি কেরিয়ার পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন বা গ্যাপ দিয়ে পুনরায় জব মার্কেটে ঢুকতে যাচ্ছেন।

কম্বাইন্ড সিভি:

 ক্রনোলজিক্যাল এবং ফাংশনাল সিভির সমন্বিত রূপই হল কম্বাইন্ড সিভি। কম্বাইন্ড ফরমেটে সিভি দুভাবে তৈরি করা যায়। প্রথমে দক্ষতা ও সফলতার বিবরণ দিয়ে তারপর অভিজ্ঞতার ক্রনোলজিক্যাল বিবরণ দিতে পারেন। অথবা ক্রনোলজিক্যাল ফরমেটে অভিজ্ঞতা সাজিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কী কাজ করেছেন তা উল্লেখ করতে পারেন। কম্বাইন্ড ফরমেট উপযোগী হবে যখন আপনার অতীত পেশাগত ইতিহাস সমৃদ্ধ থাকবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার ফলে আপনি ভালো দক্ষতা অর্জন করেছেন। এই দক্ষতাকেই আপনি কাঙ্খিত চাকরি পাওয়ার মূল চাবিকাঠি ভাবছেন।

সিভিতে কী কী থাকবে:

 সিভির প্রথমেই থাকবে হেডিং বা টাইটেল। এ অংশে আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল এড্রেস, এমনকি ওয়েব এড্রেস থাকলে সেটিও উল্লেখ করুন। সিভির শুরুতে এ অংশটুকু পৃষ্ঠার ওপরের মধ্য অংশে বা ডান কোনায় লিখতে হবে। এরপর জব অবজেক্টিভ। কোন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে আপনি সক্ষম এবং সিভির যাবতীয় তথ্য কোন দৃষ্টিকোণ থেকে পড়তে হবে সেটা জব অবজেক্টভ নিয়োগ দাতাকে বলে দেবে। সে কারণে জব অবজেক্টিভ হবে সংক্ষিপ্ত।

এরপর অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ অংশ। যে পেশা ও পদের নাম আপনি জব অবজেক্টিভ অংশে উল্লেখ করেছেন সে পেশার জন্য কেন আপনি আদর্শ প্রার্থী এখানে সে কথাই লেখা থাকবে। এটি আপনার যোগ্যতার সারসংক্ষেপ অংশ। এখানে আপনার অভিজ্ঞতা, পদবি, আপনার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন, বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা, পার্সনাল ভেল্যুজ, ওয়ার্ক এথিকস, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং যা আপনার কাঙ্খিত পেশার অনুকূলে বিবেচিত হয় লিখুন। নিচে বিস্তারিতভাবে দেয়া হল।

১. Title/শিরোনামঃ

এই অংশের প্রথমেই থাকবে আপনার নাম। নিজের পুরো নাম যা আপনার স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটে আছে তা লিখবেন একটু বড় ফন্টে। প্রয়োজনে তা বোল্ড করে দিন। এর পর লিখবেন আপনার বর্তমান ঠিকানা যেখানে যোগাযোগ করলে আপনাকে পাওয়া যাবে। তারপর ই মেইল এড্রেস এবং মোবাইল বা টেলিফোন নাম্বার। ই মেইল এড্রেসটি নিজের নাম দিয়েই তৈরি করুন। ছদ্ম বা এমন কোন নামে তৈরি করবেন না যা দৃষ্টিকটু।

২. Career Objective/ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে গুছিয়ে লিখুন:

আপনি নিশ্চয় শুধু মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানে সিভি পাঠাবেন না? প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদা সিভি তৈরি করুন। Career Objective অংশ লিখবেন কোন প্রতিষ্ঠানে যে পদের জন্য আপনি সিভিটি পাঠাচ্ছেন তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে। সেই প্রতিষ্ঠান আপনার কাছ থেকে কি কি পেতে পারে, আপনার গুণাবলী তাদের প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না এসব বিষয় মাথায় রাখুন।

৩. Experience/কাজের অভিজ্ঞতার বিবরণ:

আপনার যদি আগে কোন চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে তা লিখবেন এই অংশে। সর্বশেষ যেখানে কাজ করেছেন তা দিয়ে শুরু করবেন, এবং শেষ করবেন সর্বপ্রথম যেখানে কাজ করেছেন তা দিয়ে। তথ্যগুলো সাজাবেন এইভাবেঃ

Employer বা Organization Name (যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন তার নাম)

Position of Field বা Designation (যে পদে কাজ করেছেন)

Time Period বা Duration (কবে কাজ শুরু এবং শেষ করেছেন)

Achievement (কর্মক্ষেত্রে আপনার কোন উল্লেখযোগ্য সাফল্য থাকলে তা লিখবেন)

যদি এমন হয় আপনি একই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন তাহলে তা ক্রমানুসারে লিখুন।

৪. Educational Background/শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

এই অংশ শুরু করবেন সর্বশেষ যে কোর্সটি আপনি সম্পন্ন করেছেন তা দিয়ে। মনে করুন আপনি MBA শেষ করেছেন। তাহলে শুরু করবেন এভাবে-

Master Of Business Administration(MBA) (এখানে উল্লেখ করে দিবেন আপনি কোন বিষয়ে MBA করেছেন)

Institution: যে প্রতিষ্ঠান থেকে করেছেন

CGPA: আপনার CGPA যা ছিল

এর পর লিখবেন আপনার BBA কোন প্রতিষ্ঠান থেকে, তারপর HSC সবশেষে SSC.

যদি এমন হয় আপনি BBA বা MBA এর ফাইনাল দিয়েছেন কিন্তু রেজাল্ট এখনো প্রকাশিত হয় নি তাহলে পাশে লিখবেন (Appeared). আর যদি কোন কোর্সে আপনি এখনো পড়ছেন এমন হয় তাহলে পাশে লিখবেন (Ongoing)

৫. Computer Skill/কম্পিউটারে দক্ষতাঃ

আজকাল যে কোন চাকরির জন্যই কম্পিউটার জানা আবশ্যক। তাই এ বিষয়ক কোন কোর্স করে থাকলে বা আপনি কম্পিউটারের কোন বিষয়ে পারদর্শী হলে তা এই অংশে উল্লেখ করবেন।

৬. Language Proficiency/ভাষাগত দক্ষতাঃ

কোন কোন ভাষায় আপনার দক্ষতা আছে তা উল্লেখ করবেন। কোন ভাষায় আপনি কথা বলতে পারেন কিন্তু লিখতে পারেন না তাহলে তার পাশে verbal লিখবেন। আর যদি দুটোই পারেন তাহলে Verbal,Written এভাবে লিখবেন। বাংলা আপনার মাতৃভাষা, তাই এর পাশে শুধু Mother tongue লিখলেই চলবে।

৭. Hobbies and Interests/শখ এবং আগ্রহঃ

এইখানে আপনাকে একটু বুদ্ধি খাটাতে হবে। আপনি ক্রিকেট ফুটবল ডাকটিকেট সংগ্রহ করা ইত্যাদি লিখে যাবেন না। এমন কিছু লিখবেন যা আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন তার সাথে সংযুক্ত।

৮. Personal Information/ব্যক্তিগত তথ্যঃ

এই অংশে আপনি আপনার নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ, বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, রক্তের গ্রুপ এবং জাতীয়তা লিখবেন। এর বেশি কিছু লিখার প্রয়োজন হয় না।

৯. Reference:

এই অংশে এমন কারো নাম উল্লেখ করুন যিনি আপনার ছাত্র বা কর্মজীবন সম্পর্কে অবগত। তাদের নাম, ঠিকানা, প্রতিষ্ঠানের নাম, ইমেইল এবং মোবাইল নাম্বার লিখুন। রেফারেন্সে ব্যবহার করার আগেই যার নাম উল্লেখ করছেন তাঁর অনুমতি নিয়ে নিন।

সবশেষে মাথায় রাখতে হবে আপনার সিভিটি এমন ভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে ২০-৩০ সেকেন্ডেই আপনার সম্পর্কে দরকারি সব তথ্য যিনি পড়ছেন তিনি জেনে নিতে পারেন। কারণ এর চেয়ে বেশি সময় নিয়ে সিভি খুব কম সংখ্যক চাকরিদাতাই পড়েন। ২ পৃষ্ঠার মধ্যেই সিভি সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করুন।

সানবিডি/ঢাকা/এসএস