ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা
আইন ভেঙ্গে লভ্যাংশ ঘোষণা বিডি অটোকার্সের!
:: আপডেট: ২০১৯-১১-১১ ০৭:২৫:১৭
পুন্জিভূত লোকসানে থাকা কোম্পানি বোনাস শেয়ার দেয়ার বিধান না থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এই বিধান লঙ্গণ করে ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিডি অটোকার্স লিমিটেড। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন লঙ্গণ করার অভিযোগ উঠেছে।ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সঙ্কা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
ডিএসইতে প্রকাশ করা হয়েছে তাদের লভ্যাংশের খবর। দেশের অন্যতম বিজনেস নিউজ পোর্টাল সানবিডি২৪.কমের পক্ষ থেকে ডিএসইর নজরে আনা হলে পুন্জিভূত লোকসানের তথ্য চাওয়া হয় কোম্পানির কাছে। পরবর্তীতে এই ব্যাখ্যা প্রকাশ করা হয় ডিএসইর ওয়েবসাইডে। এতে বলা হয়েছে ৩০ জুন,২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির পুন্জিভূত লোকসান দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
তবে আইন ভঙ্গ হলে কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশসনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে।
ডিএসই সূত্র মতে, গত ২০ অক্টোবর কোম্পানির পর্ষদ সভায় ৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।এ সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৫৩ টাকা।
ডিএসইতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে এ কোম্পানিটি শুধুমাত্র গত বছর ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এছাড়া সব সময় তারা বিনিয়োকারীদের লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস দিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে একাধিক বিনিয়োগকারী সানবিডিতে অভিযোগ করে বলেন, বিএসইসি আইন করে, আর ডিএসই সে বিষয়ে খবর রাখেনা। একটি কোম্পানি সংবাদ দিলো, আর যাচাই-বাছাই না করেই প্রকাশ করে দিলো। আমরা ডিএসইর ওয়েবসাইডে তথ্য দেখে শেয়ার কিনে একদিনেই ১০ টাকা নাই প্রতি শেয়ারে।
লভ্যাংশ দেওয়ার খবরে দিনের শুরুতেই ১০ টাকা বেড়ে যায় কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দরে। আগের দিন ২০ অক্টোবর লেনদেন শেষ হয় ১৬৮ টাকা ৬০ পয়সায়। ২১ অক্টোর দিনের শুরুতেই দর বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৯ টাকা। এ হিসেবে দিনের শুরুতেই প্রতিটি শেয়ারের দর বাড়ে ১০ টাকা ২০ পয়সা। যদিও দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে ১৬৬ টাকা ১০ পয়সা। এদিন কোম্পানিটির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৯ হাজার ৩৮৮টি।
সূত্র মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট একটি নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে কোন প্রতিষ্ঠানের পুন্জিবুত (রিটেইন আর্নিং) লোকসান থাকলে সেই কোম্পানি লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এটিকে আরও পরিস্কার করার জন্য গত ২ অক্টোবর একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা ও বিতরণ সংক্রান্ত একটি নোটিফিকেশন ২০১৮ সালের ২০ জুন প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে বোনাস শেয়ার সংক্রান্ত আরও একটি নোটিফিকেশন চলতি বছরের ২৩ মে প্রকাশ করে। বিষয়টি বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির আবেদন পর্যালোচনা পূর্বক বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে অধিকতর স্পষ্ট করার প্রয়োজনে নগদ লভ্যাংশ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেয় বিএসইসি।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে‘অন্যান্য সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করে, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ পুঞ্জিভূত লোকসান বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট বছরের অর্জিত মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ, ঘোষণা ও বিতরণ করতে পারবে।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য কোম্পানিতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মো. সাইফুর রহমান সানবিডিকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করে বিএসইসি। কোন প্রতিষ্ঠান যদি আইন ভঙ্গ করে কোন কিছু করে, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কমিশন।