ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) প্রফেসর ড. শহিদ আখতার হোসেন বলেছেন, সবার জন্য পুঁজিবাজার নয়। এই বাজারে আসতে হলে কিছু জেনে শুনে আসতে হয়। কিছু না জেনে এ বাজারে আসলে লোকসানের সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।
পুঁজিবাজার বিষয়ে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর সমাপনী এবং প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদ বিতরণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) প্রফেসর ড. নাছরিন আহমেদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) প্রফেসর ড. শহিদ আখতার হোসেন।
অধ্যাপক ড. শহিদ আখতার হোসেন বলেন, পুঁজিরবাজার এখন আর আগের মতো নেই। বাজার মোটামুটি একটা স্ট্রাকচারে এসেছে। তবে ক্যাপিটাল মার্কেট সবার জন্য নয়। অনেকে না বুঝেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে নানা ধরনের কারসাজির খবর আমরা শুনতে পাই। এ্যাকাউটেন্টরা যে রিপোর্ট দিয়ে থাকেন সেখানে কারসাজির ঘটনা ঘটে। তারা স্বল্প সম্পদকে বেশি দেখিয়ে থাকে। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোম্পানির এ্যাকাউন্ট স্বচ্ছ হতে হবে; যাতে বিনিয়োগকারীরা তার উপর নির্ভর করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, না বুঝে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে অনেকেই তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন। পুঁজিবাজার সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. নাছরিন আহমেদ বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণ কর্মসূচী মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। সততার সঙ্গে কাজ করলে যে কোন লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন হলেও বাজারে তার কোন প্রভাব নেই। সবাই ক্যাপিটাল গেইন নিয়ে অস্থির। ফান্ডামেন্টাল কোন কাজ করে না। যখন পুঁজিবাজারে দর বাড়তে থাকে তখন ভালো কোম্পানির পাশাপাশি খারাপ কোম্পানির শেয়ারেরও দর বাড়ে। আবার যখন কমতে থাকে তখনও ভালো-খারাপ সব কোম্পানিরই দর কমে যায়।
ভয় এবং লোভ এ দুটি কারণে বিনিয়োগকারীরা বেশি লোকসান দিয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন বাজারে কোন কারণে ভীতির সঞ্চার ঘটে তখন সবাই শেয়ার বিক্রি করে দেয়। আবার যখন দর বাড়তে থাকে তখন আরও বাড়বে এমন লোভে তারা শেয়ার বিক্রি করে না। অতিরিক্ত ভয় এবং লোভ থেকে দূরে থাকার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর বিকল্প নেই। এ ধরনের প্রশিক্ষণ সাধারণ মানুষের উপযোগী করে প্রতিবেদন তৈরীতে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও প্রশিক্ষণ আয়োজনে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়েত ইসলাম, এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল হাকিম,লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী খন্দকার কায়েস হাসান, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতার হোসেন সান্নামাত। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ড. মিজানুর রহমান।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের গবেষণা কার্যক্রমের ওপর ৩ মাসের প্রশিক্ষণ আগস্ট মাসে শুরু হয় এবং অক্টোবর মাসে শেষ হয়। এতে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্পোরেট হাউসের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম কর্মী, একাডেমিশিয়ানসহ ৬০ জনের বেশি প্রশিক্ষণার্থী এতে অংশ নেন।
এ্যাকাউন্টিং ফর ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্টের (এসিএমডি) আয়োজনে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর অংশিদারিত্ব এবং সহযোগিতায় ছিল বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্টস ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম এবং দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।