মানুষের জন্য নিজেদের ঈদ “কোরবানি” দিয়েছে পুলিশ
আপডেট: ২০১৫-০৯-২৭ ১৯:১৬:৩৩
ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত, রাস্তাঘাটে, ঈদগাহে, ঘরবাড়ি, ব্যাংক-বিমা আর বিনোদন কেন্দ্রের নিশ্চয়তা দিতেই ব্যস্ত থেকেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি। মানুষের ঈদ নিশ্চিত করতে নিজেদের ঈদ কোরবানি দিয়েছে। মানুষের আনন্দ নিশ্চিত করতে ঘরে ফেরেনি সোয়া লাখ পুলিশ।
“মানুষের কষ্ট লাঘব করে মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে বড় ঈদ আর নেই। মানুষের আনন্দ দেখে আমরা নিজেদের স্বজনহীন ঈদ কাটানোর ব্যথা ভুলে যাই”- বলেছেন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজিপি মো. মোখলেছুর রহমান।
ঈদের আগের রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটেছে নাড়ির টানে। প্রিয়জনের সাথে মিলিত হওয়ার আনন্দে সবাই থেকেছে বিভোর। ব্যতিক্রম ছিল পুলিশ। দিনরাত রাস্তায়, রেল, নৌপথে, বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করেছে তারা। মাত্র তিনদিনে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঢাকা এবং আশপাশ থেকে চলাফেরা করেছে সারাদেশে। রাস্তাঘাট, যানবাহনের সীমাবদ্ধতা নিরসনে পুলিশ থেকেছে নিরলস। কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারাও রাস্তায় নেমেছেন-যাত্রী চলাচল নির্বিঘœ করতে। থেকেছেন ভোররাত পর্যন্ত। আবার সকালেই ঈদগাহে মুসলি¬দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনিফরম পরেছেন তারা। নিশ্চিত করেছেন মানুষের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো।
ঈদুল আজহার সরকারি ছুটিতে অফিস আদালত যখন বন্ধ, তখন পুরোপুরিই খোলা থেকেছে থানা-ফাঁড়ি, তদন্ত কেন্দ্র, সচল থেকেছে পুলিশের সব অফিস।
নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে আগেই গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। কোনো ঈদগাহ বা মসজিদে নামাজ বা অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে কালও মধ্যে কোনো সমস্যা আছে কি? আগের বছরগুলোতে কোনো গ্রাম বা মহল্লায় কোনো সমস্যা হয়েছিল কি? সেই অনুযায়ী নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজিয়েছে। আবার আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলেছে বেশকিছু এলাকার উত্তেজনা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনার মতো বড় শহরগুলোতে মানুষের ফাঁকা ঘর-বাড়ির নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হয়েছে। হঠাৎ নিরাপত্তা সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য স্ট্যান্ডবাই থাকতে হয়েছে একটি দলকে।
কোরবানির পশুর হাটে ছিনতাই, চাঁদাবাজি রোধ, অজ্ঞান পার্টি, মলমপার্টিকে প্রতিহত করতে পুলিশের তৎপরতা চোখ এড়ায়নি কারো। পুলিশের বাড়তি তৎপরতায় ওই দুস্কৃতিকারীরা ধরা পড়েছে।
এই বাড়তি চাপ নিতে নিজের ঘরে ফিরতে পারেনি পুলিশের ৮০% সদস্য। এক লাখ ছাপান্ন হাজার সদস্যের মধ্যে সোয়া লাখ থেকেছে কর্মক্ষেত্রে। ব্যারাক এবং অস্থায়ী আবাসেই কেটেছে তাদের ঈদ। বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে থেকেছে অনেক দূরে। মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য যারা এই বাড়তি চাপ নিচ্ছে।
মানুষের নিরাপদ চলাচলে এবং ঈদ উদযাপনে যথাযথ ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ রবিবার ভারপ্রাপ্ত আইজিপিকে পাঠানো এক বার্তায় ওই ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জননিরাপত্তা ও জনগণের ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত আইজিপি মো. মোখলেছুর রহমান। ঈদের ছুটি শেষে আবার মানুষের কর্মস্থলে ফেরার পথ নিরাপদ এবং নির্বিঘœ রাখতে বাড়তি দায়িত্ব পালনের জন্য সকল পুলিশ সদস্যের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।ঢাকাটাইমস