সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আসন্ন সমাপনী পরীক্ষা। প্রধান শিক্ষকদের ১০তম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন না করা হলে তারা এ পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সমাপনী পরীক্ষার পর ক্লাস বর্জন করে ক্লাসরুমে তালা লাগিয়ে লাগাতার আন্দোলনে যাবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। তাদের এমন অবস্থানে অনিশ্চিত যথাসময়ে সমাপনী পরীক্ষা আয়োজন।
তবে দ্রুতই শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে। প্রয়োজনে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হবে। যেকোনো ভাবেই হোক, যথাসময়ে সমাপনী পরীক্ষা আয়োজন করতে চায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেয়ার দাবিতে গত ১৪ অক্টোবর সারাদেশের প্রায় ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরদিন দুই ঘণ্টা ও ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে গতকাল বুধবার শিক্ষকরা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে প্রায় ৩০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। তাদের মধ্যে এখনও দুইজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও তা আজও বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে মেনেছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ডিএমপিতে লিখিতভাবে অনুমোদন চাওয়া হলেও পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকদের ১০তম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দিতে আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসছি। এ দাবিতে আমরা আসন্ন সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছি। এ পরীক্ষা বর্জন করে আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাবো না।’
এদিকে যেকোনো মূল্যে নির্ধারিত সময়ে সমাপনী পরীক্ষা আয়োজনের সকল চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বদরুল হাসান বাদল। তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে নতুন একটি সংকট তৈরি হয়েছে। সামনে সমাপনী পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এ আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এতে করে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা আয়োজন করাটা অনিশ্চয়তার দিকে যাবে। তাদের গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটি শিক্ষকদের বুঝতে হবে।’
তিনি বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে আনা হবে। তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সম্মতি জানিয়েছেন। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা হতে পারে। প্রয়োজন হলে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে তার আগে শিক্ষকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসাটা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস