বাংলাদেশের ভূমিহীন লোকের সংখ্যা ৪০ লাখ ৩০ হাজার। কৃষিশুমারি-২০১৯ জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) যুগ্ম সচিব জাফর আহাম্মদের পরিচালনায় আগারগাঁওয়ে সংস্থার সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
গত ৯ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে পরিচালিত জরিপ থেকে কৃষি তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক জাফর বলেন, “দেশে মোট ৩ কোটি ৫৫ লাখ খানার মধ্যে যাদের কোনো ধরনের জমি নেই এই রকম ভূমিহীন ৪০ লাখ ৩০ হাজার খানা। শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৩৪ ভাগ।” মোট খানার ৮৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ রয়েছে গ্রামে আর বাকি ১৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ শহরাঞ্চলে।
কৃষিশুমারির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট খানার সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার। এরমধ্যে শহরের খানার সংখ্যা ৫৯ লাখ এবং গ্রামাঞ্চলে ২ কোটি ৯৬ লাখ।
শহরের মোট খানার মধ্যে ১৭ লাখ বা মধ্যে ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং গ্রামের মোট খানার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ সম্পূর্ণ ভূমিহীন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ ভূমিহীন খানা রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপরেই রয়েছে সিলেট এবং খুলনা বিভাগে যথাক্রমে শতকরা ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
দেশের ২৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ খানার অন্তত একজন সদস্য কৃষি মজুরির উপর নির্ভরশীল বলে এই জরিপে উঠে এসেছে।
এর মধ্যে রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কৃষি মজুর খানা রয়েছে। এরপরেই রয়েছে রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগ; যথাক্রমে ৩৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ কৃষি মজুর খানা।
সারা দেশে এক কোটি ৬৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৭৪টি কৃষকের খানার মধ্যে গ্রামেই রয়েছে ৯৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
আর শহরাঞ্চলে রয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ কৃষকের খানা, যার সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ খানা রয়েছে ঢাকা বিভাগে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অডিটোরিয়ামে রোববার কৃষি শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অডিটোরিয়ামে রোববার কৃষি শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিএরপরে রয়েছে চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ কৃষকের খানার অবস্থান।
সারাদেশ ও বিশেষত গ্রামীণ অর্থনীতির আয়ের মূল চালিকা শক্তি কৃষি উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “জিডিপিতে বর্তমানে বৃহত্তর কৃষির সমন্বিত অবদান শতকরা ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি কৃষিতে নিয়োজিত।”
প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে উম্মুক্ত এবং জলাশয় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে এমন মৎসজীবী খানা রয়েছে ৯৯ লাখ ৬০ হাজার।
বরিশাল বিভাগে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ মৎস্যজীবী খানা। এরপরেই সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে যথাক্রমে শতকরা ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ মৎস্যজীবী খানা।
এই জরিপের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার গরু, ১ কোটি ৯২ লাখ ৮৭ হাজার ছাগল এবং ৭ লাখ ১৮ হাজার মহিষ আছে।
জরিপের আওতায় থাকা এলাকা নিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “কৃষিশুমারি ২০১৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পল্লী এলাকায় গড়ে ২৪০টি খানা, পৌরসভা এলাকায় গড়ে ৩০০টি খানা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় গড়ে ৩৫০টি খানা নিয়ে একটি গণনা এলাকা গঠন করা হয়।”
প্রতিটি গণনা এলাকায় তথ্য সংগ্রহের জন্য স্থানীয়ভাবে শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব নারীদের নিয়ে মোট এক লাখ ৪৪ হাজার ১৯১ জন গণনাকারী এবং এদের কাজ পরিদর্শনের জন্য স্থানীয়ভাবে ২৩ হাজার ১৭২ জন সুপারভাইজার কাজ করেছে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
এছাড়াও শুমারি কাজে দেশের ৬৪টি জেলাকে ৯০টি শুমারি জেলায় ভাগ করে বিবিএসের ৯০ জন কর্মকর্তাকে জেলা শুমারি সমন্বয়কারী করা হয়।
পাশাপাশি ৮টি বিভাগকে ১০টি শুমারি বিভাগে ভাগ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ১০ জন কর্মকর্তা বিভাগীয় শুমারি সমন্বয়কারী হিসেবে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করে।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
কৃষিশুমারি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান, মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মণ্ডল এবং পরিসংখ্যানের বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী।