সরকারের বেধে দেওয়া সময়ের মধ্য প্রথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে না আসলে বিমা কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী। বিমা কোম্পানিগুলোর সাথে বৈঠকের সময় এই হুশিয়ারি দেন তিনি।
উল্লেখ, গত ১৫ সেপ্টেম্বর, রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে সভা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। ওই সময় তিনি বলেছিলেন সকল বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে হবে। এর জন্য সময় দিয়েছিলেন তিন মাস।
আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আইপিও'র প্রথমিক কাজ শেষ করতে হবে। একই সাথে ডিসেম্বরের মধ্যে কোম্পানির মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী সানবিডিকে বলেন, যারা এখনো পুঁজিবাজারে আসেনি তাদের সাথে বৈঠকে বসেছিলাম। তাদেরকে অবশ্যই পুঁজিবাজারে আসতে হবে।
তিনি বলে,যদি তারা আসতে ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রথমে লাইসেন্স স্থগিত। পরে তারা স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে।
এদিকে আইডিআরএ, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জীবন বীমা করপোরেশন, সাধারণ বীমা করপোরেশন ও দুটি বিদেশি বীমা কোম্পানিসহ মোট ৭৮টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি জীবন বীমা, ৪৬টি সাধারণ বীমা এবং দুটি বিদেশি বীমা কোম্পানি রয়েছে। বিদেশি বীমা কোম্পানি দুটি হলো আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বা মেটলাইফ, লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন অব বাংলাদেশ।
সূত্র সানায়, ৭৮টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ৪৭টি কোম্পানি বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বাকি ২৭টি কোম্পানিকে নতুন করে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি জীবন বীমা কোম্পানি এবং ৯টি সাধারণ বীমা কোম্পানি রয়েছে। বাকি চারটি কোম্পানির মধ্যে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত, একটি বিদেশি মেটলাইফ ও বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ কোম্পানি এই চারটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে জটিলতা রয়েছে।
যে ২৭ বীমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হয়নি: ২৭টি বীমা কোম্পানির মধ্যে জীবন ১৮টি কোম্পানি হলো, বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বেস্ট লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ, সোনালী লাইফ, জেনিথ ইসলামি লাইফ, আলফা ইসলামি লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, যমুনা লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ, স্বদেশ লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ও এলআইসি বাংলাদেশ।
অন্যদিকে সাধারণ বীমা ৯টি কোম্পানি হলো ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, সাউদ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনরেল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। উল্লেখিত কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে মূলধনের ৪০ শতাংশ অর্থ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিওর) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে।
সূত্র জানায়, বিমা আইনানুযায়ী কোনো কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।এ সময়ের মধ্যে কোন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে না পারলে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে আরও ৬ মাস সময় বাড়াতে পারে। এরপরেও তালিকাভুক্ত না হলে, ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে ২০১১ সাল থেকে প্রতিটি বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দিয়ে আসছে।