পুঁজিবাজারের সাথে যুক্ত দুর্নীতিবাজ ও অসাধু ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।
রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মিজান উর রশিদ বলেন, পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বাজার পতনে বিগত প্রায় নয় বৎসর পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য দাবী আদায়ের লক্ষ্যে, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবাদ কর্মসূচী হিসাবে মানববন্ধন, মিছিল, মিটিং, অনশন ও বিএসইসি, ডিএসই, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এফবিসিসিআই এর সাথে ধরাবাহিক গুরুত্বপূর্ন মিটিং করে বিভিন্ন দাবী-দাওয়া ও স্মারক লিপি পেশ করে আসছে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে বাজারের সার্বিক প্রেক্ষাপট, সমস্যা ও সমাধান নিয়ে একটি স্মারক লিপি পেশ করি। কিন্তু শেয়ারবাজারে স্থায়ী স্থিতিশীলতা আজও ফিরে আসেনি। পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রন সংস্থা থেকে শুরু করে অধিকাংশ ষ্টোক হস্তান্তরের প্রশ্ববিদ্ধ ভূমিকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, আইসিবি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তার সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট পুঁজিবাজার ধ্বসের মূল কারণ। এছাড়া সেকেন্ডারী মার্কেটের আদলে বা সমান্তরালে অনৈতিক প্লেসমেন্ট বাণিজ্য ও দুর্বল কোম্পানির আইপিও -তে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, আইসিবি ও বিভিন্ন ইস্যু ম্যানেজারদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২১ দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি মো: মিজান উর রশিদ চৌধুরী। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আ: রাজ্জাকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাইব্যাক আইন পাশ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ইস্যুমূল্যের নিচে অবস্থান করা শেয়ারগুলো নিজ নিজ কোম্পানীকে ইস্যুমূল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে; শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে আগামী ০৩ বৎসর পর্যন্ত সকল ধরনের আইপিও, রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ রাখতে হবে। প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বানিজ্য বন্ধ করতে হবে; বুক বিল্ডিং পদ্ধতি, ডাইরেক্ট লিষ্টিং পদ্ধতি বাতিল করতে হবে; সিসি আইনের বাস্তবায়ন করতে যে সকল কোম্পানীর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ব্যক্তিগতভাবে ২%, সম্মিলিতভাবে ৩০% শেয়ার নেই, ঐ সকল উদ্যোক্তা পরিচালক ও কোম্পানীগুলোকে শেয়ার ধারন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; কোম্পানী আইনে কোথাও জেড ক্যাটাগরী এবং ওটিসি মার্কেটের কথা উল্লেখ নেই। তাই শেয়ারের কোন বিভাজন করা যাবে না। ওটিসি মার্কেটে যে সকল কোম্পানী নিয়মিত এজিএম করে এবং ডিভিডেন্ট দেয় তাদেরকে মূল মার্কেটে ফেরত আনতে হবে। যে সকল কোম্পানী এজিএম করে না, কোম্পানী বন্ধ আছে, সেই সকল কোম্পানীর সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে; কোম্পানীর ব্যবসা ভালো থাকা সত্ত্বেও যে সকল কোম্পানী নো ডিভিডেন্ট ঘোষনা করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে, সে সকল কোম্পানীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে; কোন কোম্পানীকে দি লিষ্টিং করা যাবে না। সম্প্রতি দি লিষ্টিং হওয়া মর্ডান ডাইং ও রহিমা ফুড কোম্পানীর শেয়ার হোল্ডারদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; ১০. কোন কোম্পানীর বোর্ড মিটিংয়ে ডিভিডেন্ট ঘোষনার ৭ দিনের মধ্যেই এজিএম করতে হবে। দুই আড়াই মাস পরে নয়। পৃথিবীর কোন দেশেই দুই আড়াই মাস পরে এজিএম করার নিয়ম নেই; পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে বহুজাতিক লাভজনক কোম্পানীগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত করতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের ন্যায় বাধ্যতামূলক ভাবে তাদের বিনিয়োগের ৪৯% পুঁজিবাজারে অংশ গ্রহণ করতে হবে। কারণ বিদেশী কোম্পানীগুলো তাদের কোম্পানীর স্বল্প কিছু সংখ্যক শেয়ার (২০-২৫)% শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত করে ৩০০ থেকে ৪০০% ডিভিডেন্ট দিয়ে এদেশের অর্থ বিদেশী কোম্পানীগুলো লুন্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। এই লুন্ঠন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে; পুঁজিবাজারের প্রাণ মিচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে বাজারে সক্রিয় করে তাদের সঞ্চিত অর্থের ৮০% শেয়াবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে; যে সমস্ত কোম্পানী তার মূলধন সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে আসবে ঐ সমস্ত কোম্পানীকে পেইডআপ ক্যাপিট্যালের ৪০% পর্যন্ত আইপিও অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তবে কোম্পানী প্লেসমেন্ট শেয়ারের টাকা কোন প্রকারেই কোম্পানীর পেইডআপ ক্যাপিটাল হিসাবে দেখাতে পারবে না এবং কোম্পানী পুঁজিবাজারে আসার একমাস পূর্বে কোম্পানীর প্রসপেক্টস সমস্ত ব্রোকারেজ হাউস ডিএসই, সিএসই তে পাঠাতে হবে। সাংবাদিকদেরকে এবং বিনিয়োগকারীদের চাহিবা মাত্র কোম্পানী প্রসপেক্টস দিতে বাধ্য থাকিবে; পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধির জন্য সহজশর্তে অর্থাৎ ৩% সুদে ১০,০০০/- (দশ হাজার) কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। যা আইসিবি, বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে ৫% হারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোন হিসাবে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে; খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পুঁজিবাজার লুণ্ঠনকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিপরীতে বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ নামে বিকল্প স্টক এক্সচেঞ্জ করতে হবে; বিনিয়োগকারীদের “বিনিয়োগ নিরাপত্তা আইন” অতিদ্রুত প্রনায়ন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে; বাজারের ভয়াবহ পতনে ২০১০-২০১৯ সাল পর্যন্ত যে সকল বিনিয়োগকারীরা অসুস্থ্য হয়ে, হার্টএ্যাটাক করে আত্মহুতি দিয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরন দিতে হবে; পুঁজিবাজারের এই ক্রান্তিকালে মার্জিন ঋণে জর্জরিত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এই মুহুর্তে মার্জিন ঋণের আওতাভূক্তদের সুদ সম্পূর্ন মওকুফ করতে হবে; ফোর্স সেল বন্ধ করতে হবে।
ইতোপূর্বে অর্থ মন্ত্রনালয় ও বিএসইসি’র নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত যে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারী মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ কর্তৃক ফোর্স সেল ও ট্রিগার সেলের শিকার হয়েছেন সে সমস্ত বিনিয়োগকারীর কোডে বিক্রিকৃত মূল্যে শেয়ার ক্রয় করে দিতে হবে এবং পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব ৩৩ লক্ষ বিনিয়োগকারীদের জীবন-মান রক্ষা ও পুঁজিবাজার রক্ষার যৌক্তিক আন্দোলন করতে গিয়ে “বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ” এর নেতাকর্মী বিনিয়োগকারীদের উপর গ্রেফতার, হামলা, মামলা, গোয়েন্দা নজরদারী এবং মুচলেকা নেওয়া সহ সব রকমের হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
সানবিডি/এসকেএস