বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সম্প্রতি পরিবেশ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে চীন। এ কারণে দেশটি জ্বালানি ব্যবহারে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। দেশটির গৃহস্থ, বিদ্যুৎ ও শিল্প-কারখানায় জ্বালানির জন্য কয়লার পরিবর্তে ক্লিন এনার্জি হিসেবে পরিচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। চীনে ক্রমবর্ধমান এ জ্বালানির চাহিদা ২০৩০ সাল নাগাদ বর্তমানের তুলনায় ৮২ শতাংশ বাড়তে পারে বলে প্রত্যাশা করছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংস্থা সিনোপ্যাক। খবর রয়টার্স।

চায়না পেট্রল অ্যান্ড কেমিক্যাল করপোরেশন বা সিনোপ্যাকের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৫১ হাজার কোটি ঘনমিটারে। যেখানে ২০১৮ সালে দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ছিল ২৮ হাজার কোটি ঘনমিটার। অর্থাৎ এক দশকে দেশটিতে জ্বালানিটির চাহিদা বাড়বে ২৩ হাজার কোটি ঘনমিটার, যা বর্তমানের তুলনায় ৮০ শতাংশের বেশি।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে দেশটির নগরকেন্দ্রিক গৃহস্থ, শিল্প-কারখানার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত। চলতি বছরে চীনের এসব খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বেড়ে ৩০ হাজার কোটি ঘনমিটারে উন্নীত হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে সর্বাধিক প্রবৃদ্ধি আসতে পারে নগরকেন্দ্রিক গৃহস্থ খাতে। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে দেশটির এ খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদায় চাঙ্গা ভাব বজায় থাকবে। কারণ এ খাতে জ্বালানিটির ব্যবহার বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সিনোপ্যাকের তথ্য অনুযায়ী, আগামী এক দশকে খাতটিতে জ্বালানিটির চাহিদা বাড়বে বর্তমানের তুলনায় ৭০ শতাংশের বেশি। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। এছাড়া নগরকেন্দ্রিক জীবনেও বাড়ছে জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার। ২০৩০ সাল নাগাদ নব্য নগরায়ণ ও নগরকেন্দ্রিক গৃহস্থ খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়তে পারে যথাক্রমে ৫৯ দশমিক ৭ ও ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে চীনের শহরে গৃহস্থকাজে গ্যাসের চাহিদা ছিল ৯ হাজার ২৫০ কোটি ঘনমিটার, যা দেশটির মোট গ্যাসের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ।

গৃহস্থ খাতে চাহিদার প্রবৃদ্ধি সর্বাধিক থাকলেও দেশটির প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্মিলিত চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখবে শিল্প-কারখানাগুলো। সিনোপ্যাকের একজন কর্মকর্তা বলেন, চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ার পেছনে শিল্প খাতটি মেরুদণ্ডের ন্যায় ভূমিকা রাখবে। পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকায় শিল্প-কারখানার জ্বালানি হিসেবে এ সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়বে।

এ খাতে ২০১৮ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৬০ কোটি ঘনমিটার, যা আগের বছরের তুলনায় ১ হাজার ৯২০ কোটি ঘনমিটার বেশি এবং দেশটির মোট ব্যবহারের ৪০ শতাংশ।

এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদায় বর্তমানের তুলনায় কিছুটা চাঙ্গা ভাব বজায় থাকতে পারে। আগামী বছরে দেশটির উপকূলীয় প্রদেশগুলোয় গ্যাসভিত্তিক কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর কথা রয়েছে।

তবে সিনোপ্যাকের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদায় প্রবৃদ্ধি থাকবে খুব সীমিত। সম্প্রতি দেশটির সরকার এ খাতে বিদ্যমান ভর্তুকি কমিয়ে আনায় প্রভাবে চাহিদা কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়তে পারে।

চীনে এবার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্য আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে প্রতি টন এলএনজির দাম পড়েছে গড়ে ৩ হাজার ২৪ ইউয়ান (স্থানীয় মুদ্রা)। একদিকে অর্থনৈতিক শ্লথগতি, অন্যদিকে জ্বালানিটির দাম বাড়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।

চীনের খাতসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, দেশটির গ্যাসভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র লোকসানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এরই মধ্যে কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছর এ খাতে দেশটির গ্যাসের চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ঘনমিটার, যা তাদের মোট চাহিদার ১৭ শতাংশ।

সূত্র:বণিকবার্তা