আমেরিকার সিলিকন ভ্যালিতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র বাস্তবায়নে একগুচ্ছ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।
গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপল, সিস্কো বা অ্যাডোবি-র মতো সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নৈশভোজের আসরেই মি মোদি জানিয়েছেন ভারতে পাঁচশোরও বেশি রেলস্টেশনে গুগলের সাহায্যে ফ্রি ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালু হবে।
মাইক্রোসফটও বলেছে তারা ভারতের পাঁচ লক্ষ গ্রামে কম খরচের ব্রডব্যান্ড দিতে সরকারকে সাহায্য করবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসেতে বিশ্বের বড় বড় টেকনোলজি জায়ান্টদের প্রধানদের সঙ্গে এদিন এক মঞ্চে বসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি – তারপর প্রায় সাড়ে তিনশোরও বেশি বিজনেস লিডারের সঙ্গে নৈশভোজের আসরেই তিনি মতবিনিময় করেন। আর ওই মঞ্চেই ভারতের সঙ্গে তাদের নতুন সহযোগিতার কথা জানান গুগলের ভারতে জন্মানো সিইও সুন্দর পিচাই। ভারতের বিভিন্ন রেলস্টেশনে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য গুগুল ঠিক কী করবে, সেই ঘোষণা আগামিকাল গুগলের সদর দফতরে গিয়ে
প্রধানমন্ত্রী মোদিই করবেন বলে জানিয়েছিলেন মি পিচাই। কিন্তু মি মোদি আর ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি। তিনি তখনই জানান, এয়ারপোর্ট লাউঞ্জের মতো রেলস্টেশনেও যাতে ফ্রি ওয়াই-ফাই মেলে তার জন্য সরকার গুগলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব শিগগিরি সারা দেশে পাঁচশোরও বেশি স্টেশন এই ওয়াই-ফাই কভারেজের আওতায় আসবে। এছাড়া গ্রামে গ্রামে তৈরি হবে ইন্টারনেট-নির্ভর কমন সার্ভিস সেন্টার, তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে গড়ে তোলা হবে স্মার্টসিটি।’
সিলিকন ভ্যালির ওই নৈশভোজের আসর থেকে ভারতের জন্য একসঙ্গে যতগুলো সুখবর এসেছে, তার প্রতিটিই আসলে শিরোনামে আসার মতো।
যেমন, ভারতীয় স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর জন্য ১০০০ কোটি রুপি লগ্নির কথা ঘোষণা করেছে কোয়ালকম, মাইক্রোসফট বলেছে তারা ভারতের পাঁচ লক্ষ গ্রামে কম খরচের ব্রডব্যান্ড চালু করতে সাহায্য করবে।
ভারতের ডেটা সেন্টার ও শিক্ষাপদ্ধতিতেও অচিরেই চালু হবে মাইক্রোসফটের ক্লাউড সার্ভিসেসের প্রয়োগ।
তবে ভারতে সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির গবেষণা-প্রধান সুমন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মনে করেন এই পদক্ষেপগুলো মসৃণভাবে রূপায়ণ করাটাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
তাঁর কথায়, ‘সিলিকন ভ্যালির এই নৈশভোজটা দারুণ ব্যাপার সন্দেহ নেই। কিন্তু যেটা তত দারুণ নয় তা হল এই যে নতুন পার্টনারশিপ হতে চলেছে তার গভর্ন্যান্স কীভাবে হবে, কোন আইনি নথি মেনে হবে তা একেবারেই পরিষ্কার নয়।’
মি চট্টোপাধ্যায় বলছেন সম্প্রতি ভারতে এনক্রিপশন পলিসি নিয়ে যে বিতর্ক হল তাতে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এ দেশে যাবতীয় যা কমিউনিকেশন হবে সরকার কোনও না কোনওভাবে তা তাদের নাগালে রাখতে ইচ্ছুক!
ফলে এই সব কর্মসূচী বাস্তবায়নের পর্যায়ে আসতে গেলেই মব কোম্পানি জানতে চাইবে এনক্রিপশন বা ট্রান্সপারেন্সির প্রশ্নে ভারতের অবস্থান কী। তখন সরকার কী করে সেটাই দেখার!’ বলছেন সুমন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
প্রায় একই কথার প্রতিধ্বনি করে মাইক্রোসফটের ভারতীয় বংশোদ্ভুত সিইও সত্য নাদেলাও সতর্ক করে দিয়েছেন, প্রযুক্তি শুধু একটা হাতিয়ারমাত্র – এর সঠিক ব্যবহারটা নির্ভর করবে সুশাসন বা গুড গভর্ন্যান্সের ওপর!
সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে মাত্র ১৫ শতাংশ বাড়িতে ইন্টারনেট আছে। মি নাদেলাও তাই বলছেন, মানুষের হাতের নাগালে যতদিন না কম খরচে নেট ব্যবহারের সুযোগ আসছে ততদিন কিন্তু ভারতে তেমন কোনও ডিজিটাল বিপ্লব সম্ভবই হবে না! বিবিসি