পেঁয়াজের পর এবার চালের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি চিকন চালে সর্বোচ্চ দাম বেড়েছে ১০ টাকা, আর মোটা চালে ৬ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত চাল মজুদ আছে। বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। এরপরও অতি মুনাফার লোভে মিলারদের কারসাজিতে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম।
শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজার, নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪২-৪৪ টাকা। নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৮ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৪- ৪৮ টাকা। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৫ টাকা। এ ছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৩২-৩৩ টাকা।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়তি। কারণ পাইকাররাও মোকাম মালিকদের কাছ থেকে বেশি দরে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। এর পেছনে মিলারদেরই কারসাজি রয়েছে।
ক্যাবের সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, হঠাৎ করে চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক। কারণ দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ধানেরও বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। দাম যেন আর না বাড়ে সেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এ জন্য বিশেষভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে।
এদিন রাজধানীর পাইকারি চালের আড়ত ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২৩০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২১০০ টাকা। নাজিরশাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২৭৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৬০০ টাকা।
বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে দুই হাজার টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ১৮০০ টাকা। এ ছাড়া স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয় ১৭০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৬০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়ত আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিলাররা কারসাজি শুরু করেছে। তারা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কাছে চালের অর্ডার দিলে তারা বাড়তি রেট (দর) আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে। তাই সে দামেই আমাদের আনতে হচ্ছে। বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দরে।
তিনি আরও বলেন, নওগাঁ, দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোকামে যে মিনিকেট চাল প্রতি বস্তা এক সপ্তাহ আগে কিনেছি দুই হাজার টাকা দরে। সেই চাল এখন ২২৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। নাজিরশাল প্রতি বস্তা কিনতে হচ্ছে ২৫০০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ২৪০০ টাকা ছিল। বিআর-২৮ কিনতে হচ্ছে ১৭৫০ টাকায়। যা আগে ছিল ১৬০০ টাকা। এ ছাড়া স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তার দাম ছিল ১৫০০ টাকা। যা এখন কিনতে হচ্ছে ১৬০০ টাকায়।
দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা হুমায়ুন ফারুক জানান, বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। এরপরও ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দামে ধান কেনায় চাল উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই চালের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, বাজারে সবচেয়ে বেশি চালের চাহিদা রয়েছে বিআর-২৮ ও মিনিকেট জাতের। আর এ জাতের ধানের উৎপাদন হয় এপ্রিলে। এ সময়টায় এ জাতের ধান না পাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, হঠাৎ করে চালের দাম বেড়েছে। সারা দেশের মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিশেষভাবে মনিটরিং করা হবে। অসাধুভাবে দাম বাড়ালে ভোক্তা আইনে শাস্তি দেয়া হবে।
কুষ্টিয়ায় মিল গেটে দাম বেড়েছে ৬ টাকা : কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চল মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে হঠাৎ করেই বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মিল গেটে প্রকারভেদে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫-৬ টাকা।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মিল মালিকরা বলছেন, হঠাৎ করে বেড়েছে ধানের দাম, চাহিদা অনুযায়ী হাটবাজারে ধান আসছে না, তাই চালের দাম বেড়েছে। বিক্রেতাদের দাবি মোকাম থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে বলে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চালের দাম দীর্ঘসময় স্থিতিশীল থাকলেও বাজার হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে ক্রেতারা। শুক্রবার কুষ্টিয়ার খাজানগর চাল মোকাম ও শহরের বড় বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
কুষ্টিয়া অটো চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, বর্তমানে মিলারদের গুদামে চাল কমে এসেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে সরকার ধান-চাল ক্রয়ের ঘোষণা দেয়ায় সবাই বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।
নওগাঁয় দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৪-৫ টাকা : নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, উত্তরাঞ্চলে ধান-চালের সবচেয়ে বড় মোকাম নওগাঁয় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম প্রতি কেজিতে ৪-৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে ১০০-২০০ টাকা। বাজারে জিরাশাইল ও ২৮ জাতের ধানের আমদানি কমে যাওয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারত থেকে ‘সম্পা কাটারি’ চালের আমদানি বন্ধ হওয়ায় জিরাশাইলের ওপর চাপ পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নওগাঁ ধান ও চাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, জিরাশাইল, আটাস ও ঊনত্রিশ বছরে একবার বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়ে থাকে। আর সারা বছর ব্যবহার করা হয়। বছরের সাত মাস পেরিয়ে গেছে।
এদিকে- কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে ধানের পরিমাণ কমে এসেছে। এই ধান দিয়ে আরও পাঁচ মাস চালাতে হবে। যার কারণে বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিবছরের এ সময়ে এসে চালের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। সূত্র: যুগান্তর
সানবিডি/ঢাকা/এসএস