স্থানীয় সরকারের পৌরসভা আইন-২০১৫ (সংশোধন) পাসের গেজেট জারির পর পৌর নির্বাচনের সব ধোঁয়াশা কেটে গেছে। ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের টার্গেট রেখে দু’একদিনের মধ্যেই ২৪৫টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে হিসেবে ২৯ অথবা ৩০ ডিসেম্বের হতে পারে পৌর নির্বাচন।
রোববার পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কমিশনারদের বৈঠকের পর প্রাথমিকভাবে এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যর কমিশন। ইসি সূত্রে এ খবর জানা যায়।
ইসি কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে দলীয়ভাবে মেয়র নির্বাচনের বিধান সংক্রান্ত স্থানীয় সরকারের পৌরসভা আইনের সংশোধনীর গেজেট কমিশনে এসে পৌঁছায়। এরপরেই সিইসির নেতৃত্বে অন্যান্য কমিশনাররা বৈঠকে বসে নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করে। রোববারই চুড়ান্ত বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়।
ইসি সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা এবং সন্ধ্যার পর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা। কমিশন থেকে আজ সোমবার দুপুরের মধ্যে দু’টি বিধিমালার ভেটিং সম্পন্ন করে ফেরত পাঠানোর জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ সোম বা মঙ্গলবারেই পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। নির্বাচন বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালা ভেটিং হয়ে আসলেই এই দুই দিনের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করার ইচ্ছা ইসির।
সোমবার আইনমন্ত্রণালয় বিধিমালায় ভেটিং সম্পন্ন করে ইসিতে পাঠালে তা কমিশন আরেকবার দেখবে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইসির দ্বিমত না থাকলে বিধিমালা জারির জন্যে এসআরও নম্বর দিতে আইন মন্ত্রণালয়ে আবার পাঠানো হবে। এসআরও নম্বর যোগ হলেই বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সংসদে ইতিমধ্যে পৌরসভা সংশোধন আইন পাস হয়েছে। এর আলোকে বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা প্রণয়ণ করা হয়েছে। আশা করছি, আইন মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার দুপুরের মধ্যে এটা চূড়ান্ত হয়ে ইসিতে পৌঁছাবে। এরপরই আমরা সোমবার বা মঙ্গলবারের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করতে পারি। সেক্ষেত্রে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরের ২৯ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে, জানান তিনি।
তফসিল ঘোষণার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে সোমবারই সবকিছু চূড়ান্ত হলে সোমবারই তফসিল দিতে প্রস্তুত আমরা।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কমিশনে এখনো বৈঠক হয়নি। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে আসার পর বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হবে। তবে আমাদের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১২ অক্টোবর দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচন করতে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তের পর ৩ নভেম্বর এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি হয়। দলগতভাবে সব পদে পৌর নির্বাচনের অধ্যাদেশ হাতে পেয়ে বিধিমালায় সংশোধন এনে ইসি তা ৫ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠায়। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশ বাতিল করে পৌরসভা আইন ২০১৫ (সংশোধন) বিল সংসদে উত্থাপন করে।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) শুধু মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের বিধান রেখে পৌরসভা সংশোধন আইন ২০১৫ বিল পাস হয়। পরে রাষ্ট্রপতি এতে সম্মতি দিলে শনিবার (২১ নভেম্বর) পৌরসভা সংশোধন আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
এদিকে নির্বাচনে প্রস্তুতি হিসেবে প্রতীক নির্ধারণ করেছে ইসি। রাজনৈতিক দল হিসেবে হাইকোর্ট থেকে জামায়েত ইসলামী নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মেয়র পদে প্রার্থী দিতে পারবে। দলের মনোনীত প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য তিন পদে ৩৪টি প্রতীক রেখেছে।
এই প্রতীকগুলো হলো: স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য জন্য (১২টি প্রতীক)- ইস্ত্রি, কম্পিউটার, ক্যারাম বোর্ড, চামচ, জগ, টাই, নারিকেল গাছ, বড়শি, মোবাইল ফোন, রেল ইঞ্জিন, হ্যাঙ্গার ও হেলমেট।
স্বতন্ত্র সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ১০টি প্রতীক হলো- আঙ্গুর, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, চকলেট,চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, মৌমাছি ও হারমোনিয়াম।
স্বতন্ত্র সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য জন্য ১২টি প্রতীক হলো: উটপাখি, গাজর, টিউবলাইট, টেবিলল্যাম্প, ডালিম, ঢেঁড়শ, পাঞ্জাবি, পানিরবোতল, ফাইল কেবিনেট, ব্রিজ, ব্ল্যাক বোর্ড ও স্ক্রু ড্রাইভার।
ইসির তথ্য মতে, বর্তমানে সারাদেশে পৌরসভার সংখ্যা ৩২৩টি। এর মধ্যে ২০১১ সালে নির্বাচনী উপযোগী ২৬৯টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল সাবেক ড. শামসুল হুদা কমিশন। তবে এবার স্থানীয় সরকারের দেয়া তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে ২৪৫টি নির্বাচন উপযোগী রয়েছে। সূত্র: বাংলামেইল