গ্রিন বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১১-২১ ০৯:১৬:১৬
দেশে গ্রিন বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলসহ পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের (বিএএসএম) উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে গ্রিন বন্ড প্রচলন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। সেমিনারে গ্রিন বন্ডের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির পরিচালক এবং বিএএসএমের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। তাই এটি দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের পোশাক খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান বড় বিনিয়োগে সবুজ কারখানা করেছে। অথচ এর বিপরীতে ক্রেতারা কিন্তু পণ্যের বাড়তি দাম দিচ্ছেন না। আমাদের এখানে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন হয়নি। এটাকে উন্নত করতে হবে। যেহেতু আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছি, তাই গ্রিন বন্ডের বিষয়ে আমাদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রিন বন্ড ইস্যুর জন্য আমাদের সম্পদ প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে বাইরের উৎসের চেয়ে নিজেদের উৎস থেকে সম্পদ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। আইএফসি বন্ডের ক্ষেত্রে বেশকিছু বাধার কথা জানিয়েছে। আমরা এগুলো দূর করার জন্য কাজ করব।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং বিএএসএমের বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, আমাদের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যদি বন্ড মার্কেটকে উন্নত করা না যায়, তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্থায়ী হবে না। বন্ড মার্কেট কেন উন্নত হচ্ছে না তার কারণগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে অবহিত করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে স্ট্যাম্প ডিউটি সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। যেখানে ২ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটির জায়গায় শূন্য দশমিক ১ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৫ হাজার ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হবে। তাছাড়া যেসব কর অবকাশ সুবিধা বন্ড মার্কেটকে দেয়া প্রয়োজন, সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, বন্ড মার্কেট এবং গ্রিন বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে নীতিমালা আমরা তৈরি করব। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ও জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়ানোর জন্য বন্ড মার্কেটের পাশাপাশি গ্রিন বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করতে হবে। এছাড়া ২১০০ সালের জন্য যে ডেল্টা প্ল্যানের কথা বলে হয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে গ্রিন বন্ড ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়নের জন্য টেকসই অর্থায়ন ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে গ্রিন বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে হবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ট্রেজারি বন্ডগুলোকে দ্রুত লেনদেনযোগ্য করার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানান,‘আইএফসি ধারণা করছে, ২০১৮-৩০ সালের মধ্যে আমাদের ক্লাইমেট স্মার্ট ইনভেস্ট অপরচুনিটি হবে ১৭২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আমাদের গ্রিন ট্রান্সপোর্ট ও ট্রান্সপোর্ট অবকাঠামোর ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে। সরকার বিআরটিসি বা অন্য প্রতিষ্ঠানকে যে টাকা দিচ্ছে, সেটা একদম বিনামূল্যে না দিয়ে অন্তত ১ শতাংশ হলেও গ্রিন বন্ড ইস্যু করতে বলা উচিত বলে জানান তিনি।
সেমিনারে টেকনিক্যাল পর্বে বাংলাদেশে গ্রিন বন্ড প্রচলনের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আলোচনা করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (করনীতি) মো. আলমগীর হোসেন এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন। পর্বটি পরিচালনায় ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও বিএএসএমের মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম।