পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের আইনটি করা হয় ২০১০ সালে। এরপর অনেক সময় গড়িয়েছে। কিন্তু পাট মন্ত্রণালয় অনেক চেষ্টা করেও দেশে পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়াতে পারেনি। সম্প্রতি পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়াতে কয়েকটি কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
এ অবস্থায় রোববার মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়ীই বলেছেন, তাঁরা এখন পাটের বস্তা ব্যবহারে আগ্রহী।
‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’-এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করে পাট মন্ত্রণালয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) গতকাল রোববার সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আইন অনুযায়ী, ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি—এই ছয় পণ্যের মোড়কে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করতে ৩০ নভেম্বর থেকে সারা দেশে একযোগে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করবে পাট মন্ত্রণালয়।
মতবিনিময় সভায় বাদামতলী চাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বলে দিয়েছি যে ৩০ নভেম্বরের পর চালে আর কোনো প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করব না।’
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে চিনিতে আমরা এখন থেকে পাটের বস্তা ব্যবহার করব।’
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, পাটের বস্তা ব্যবহার না করা কোনো পণ্য আমরা আর পরিবহন করব না। কিন্তু তার আগে আপনাদের পাটের বস্তা ব্যবহারের বিষয়ে আরও প্রচার চালাতে হবে, যেন সবাই এই বস্তা ব্যবহার শুরু করে।’
আরেকজন ব্যবসায়ী জানান, তাঁরা পাটের বস্তা ব্যবহার করতে চান। কিন্তু সব জায়গায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বস্তা পাওয়া যায় না। এ জন্য বস্তা সহজলভ্য করার দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফাইজুর রহমান বলেন, দেশীয় সার পাটের বস্তায় ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু আমদানি করা সার বাল্কে আসে। এগুলো বিদেশ থেকেই আসে প্লাস্টিকের বস্তায়। সেই বস্তা খুলে সেগুলো আবার পাটের বস্তায় ভরে বিপণন করলে গেলে অনেক সারের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আমদানি করা সার যেন প্লাস্টিকের বস্তাতেই বিপণন হয় সে বিধান রাখার অনুরোধ করেন তিনি।
সভার প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমদানি করা সার বাল্কে আর প্লাস্টিকের ব্যাগ—এই দুভাবে আসে। ব্যাগে যেটা আসে সেটা খুলে পাটের বস্তায় পরিবহন করা কঠিন। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সারে পাটের বস্তাই ব্যবহার করতে হবে। চিনি করপোরেশনকেও বস্তা ব্যবহার করতে হবে। বেসরকারি চিনিকলগুলোকেও এ বিষয়ে নির্দেশ দিতে হবে।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, দেশে পাটের বস্তার কোনো সংকট হবে না। বিজেএমসি ও বিজেএমএ চাহিদা অনুযায়ী বস্তা উৎপাদনে সক্ষম। সেভাবে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিজেএমসি ইতিমধ্যে ৫০ কেজির পাটের বস্তা তৈরি করছে। তাদের ২, ৫ ও ১০ কেজির ছোট ব্যাগ বানাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন সহজে ব্যবহার করা যায়। খুব শিগগির একবার ব্যবহার উপযোগী (ওয়ান টাইম ইউজ) পাটের ব্যাগের উৎপাদনও শুরু হবে।
সভায় বক্তব্য দেন পাটসচিব ফরিদ উদ্দিন। সভায় পাট খাত-সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।