একমাস পর নির্দোষ প্রমাণ হয়ে জেল থেকে ছাড়া পেলো। নাটক, সিনেমা ও যাত্রার প্রতি প্রচণ্ড নেশা ছিল। কারণ ছোট বেলায় পাশের বাড়ির চাচার উঠানেই যাত্রা হতো প্রতি বছর।
চলার পথে একদিন অভিনেতা সিরাজ হায়দার সাহেব এর সাথে পরিচয় হয়।
তখন উনি রঙ্গনা নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার।
বারেক এর দিকে তাকিয়ে বলেন, নাটক করবেন? মঞ্চ নাটক?
বারেক থতমত খেয়ে বলে আমি? হ্যাঁ আপনি।
নাটকের স্ক্রিপ্ট হাতে আসলো।
কিন্তু কি সমস্যা, রিকশার জায়গায় রিসকা হয়ে যাচ্ছে, বাতাস বলতে গিয়ে বাসাত হচ্ছে।
সবাই হাসহাসি করছে।
সাধুভাষা এত কঠিন?
সাধুভাষা শেখার ক্লাস শুরু করলো।
হয়ে গেলো।
হায়দার সাহেব কে বললো, এবার আমি প্রস্তুত আমাকে পার্ট দেন।
কথা শুনে আরেক দফা হাসির রোল উঠলো।
মনু তুমি করবা নাটক? সবাই বিরক্ত।
বারেক পার্ট করবে মানে, রিহার্সালের সময় নষ্ট।
আরে, রাখে আল্লাহ মারে কে?
সিরাজ সাহেব হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, ছাই এর নিচেই আগুন আছে।
প্রথম নাটকেই বাজিমাত, ‘মোর নাম বারেক, মোরে ছেনো?’
প্রথম পুরস্কার পেল।
যারা হাসাহাসি করেছিলো তারাই বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, এত বাস্তব অভিনয় কি করে করলে? প্রথম পুরস্কারও ছিনিয়ে নিলে।
একের পর এক নাটক মঞ্চায়ন হতে থাকে।
চারিদিকে খবর হয় বারেক এর অভিনয় ক্ষমতা আছে বটে।
ওখানেই বন্ধুত্ব হয় নায়িকা দিলারা ইয়াসমিন, বাবুল আহমেদ সাহেব ও জুলিয়ারসহ আরও অনেকের সঙ্গে। যারা পরবর্তীতে বাংলা সিনেমায় সাফল্যের সাথে অভিনয় করেছেন।
ছয় মাস বেকার থাকার পর, পেট্রো বাংলা থেকে তলব আসে।
পেট্রো বাংলায় জয়েন করে কমার্শিয়াল অফিসার পদে।
জীবন পাল্টাতে থাকে। উড়োজাহাজে সিলেট আসা-যাওয়া, ফরেনারদের সাথে সারাক্ষণ উঠা-বসা। ইংরেজি ভাষাও ভালো দখল চলে আসে।
জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে, মনের সাথে মনের যুদ্ধও বাড়ে। যাকে বিয়ে করানো হলো, এতদিন পার হলো ভালোবাসা তো জন্মায় না।
যদি ভালোবাসা নাই জন্মায় তাকে আটকে রাখা উচিৎ হবে না।
তালাক নামা পাঠানো হয়।
শ্বশুরের কাছেও এক কপি পৌঁছে যায়।
পরের দিন বারেক এর শাশুড়ি পোটলা নিয়ে কাসেম সাহেব এর বাসায় হাজির। সাথে একটা চিঠি।
বারেক এর শ্বশুর লিখেছেন, আমার মেয়ে আমি নিয়ে আসবো, আপনাদের মেয়েও আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। তালাকনামাও যথা সময়ে পেয়ে যাবেন।
কারণ আমার চার বউয়ের মধ্যে একজন না থাকলে কিছু আসে যায় না।
বারেক এর বাবা পড়ে যান মহাবিপদে।
কোন উপায় না পেয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। বারেক এর বাসায় উঠে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন।
মহাবিপদ, মহিলার দশ বারোটা বাচ্চা নিয়ে তালাক হয়ে যাবে?
গ্রামের লোক কি বলবে? শাশুড়ির কি দোষ?
মানুষ বলবে- পর কোনদিন আপন হয় না, যতই লালনপালন করো না কেন।
কাসেম সাহেব এর ঘুম নেই, রাতভর বারেক এর হাত দু’টি ধরে অঝোরে কাঁদেন।
বাবার কান্না দেখে বারেকও কাঁদে।
নিজের বাবাকে কখনো দেখেনি, এই বাবাকে ছোটবেলায় কত জ্বালিয়েছে।
কোনদিন বিরক্ত হয়ে উফ বলেননি।
এই বাবা কষ্ট পেলে আল্লাহ মাফ করবে না।
চোখের সামনে ভেসে ওঠে কতো স্মৃতি
মনে পড়ে- একদিন বাবার সাথে হাটে যায় সাপ্তাহিক বাজার করবে।
বাবাকে বলে বাবা গরুর গলার ঘণ্টা কিনে দাও। পিতলের ঘণ্টা। চার গরুর চারটি।
বাবা বলেন, অন্য সময় কিনবো, আজকে ঘণ্টা কিনলে বাজার করতে পারবো না।
সাথে সাথে বারেক গলা ফাটিয়ে কেঁদে বাজারের কাদামাটিতে শুয়ে পড়ে।
বাবা আদর করে কোলে নিয়ে অবুঝ বারেক এর জন্য ঘণ্টা কিনে।
বাজার করা হলো না।
খালি বাজারের থলে নিয়ে টুংটাং ঘণ্টার আওয়াজ করতে করতে বাড়ি ফিরলো।
ভেবে ছিলো আজকে বাড়ি ফিরলে মা না তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে বসে।
কপালে মারও জুটতে পারে।
অন্ধকার রাতে সারা শরীরে কাদা মেখে ভয়ে ভয়ে বাবা ছেলে বাড়ি ফিরে।
সমস্ত ঘটনা মা শুনে, মুচকি হেসে বলেন- ‘হেতে হইছে কি? মোর এওগ্যা পুলা, বাবা তুই খুশি থাকলে মোগো খাওয়া লাগবো না।’
গোসল করিয়ে পাশের বাড়ি থেকে অল্প দুধ ধার করে দুধ-ভাত মুখে তুলে দেয়।
এই বাবা মাকে দুঃখ দিলে আল্লাহ নারাজ হবে।
বারেক বাবাকে সান্তনা দিয়ে বলে, আপনি বাড়ি যান আমি তালাকনামা উঠিয়ে নিবো।
বাবার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বলে, আপনাদের কোনদিন কষ্ট দিবো না। পৃথিবীর সমস্ত সুখ আপনাদের পায়ে লুটিয়ে দিবো।
কথা দিলাম। চলবে... সূত্র: দেবি গাফফার ফেসবুক
পর্ব-০১ পর্ব-০২ পর্ব- ০৩ পর্ব- ০৪ পর্ব
সানবিডি/ঢাকা/এসএস